গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে চুরি বন্ধ করার দাবি

গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে চুরি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদনের ওপর গণশুনানি হয়েছে। শুনানিতে এই দাবি জানানো হয়।
কাওরান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গ্যাসের দাম ১৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। কারিগরি কমিটি গ্যাসের দামের সাথে  গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, সঞ্চালন ব্যয়, বিতরণ ব্যয় রাখতে বলেছে।

মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর তালিকায় থাকা নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকরা বর্তমানে গড়ে তিন টাকা ৪৫ পয়সায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনে থাকে। এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর সব ধরনের তহবিল এবং চার্জ ধরে এই গ্যাসের দাম ঘনমিটার প্রতি ১১ টাকা ৭৫ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস। কারিগরি কমিটি মনে করছে এই দর আট টাকা ৪১ পয়সা হওয়া যৌক্তিক। এতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিতাসের কোন লোকসান হবে না।

বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুৎ), সার কারখানা, শিল্প ও সিএনজি গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদন করে তিতাস। আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়নোর আবেদন করা হয়নি।

শুনানি পরিচালনা করেন কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদুউল হক ভুঁইয়া, মো. আব্দুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি খাতের আয় ব্যয়ে অস্পষ্টতা আছে। উৎপাদন পর্যায়ে গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে বিইআরসির ভূমিকা নেই। এই বিষয়ে সংস্কার দরকার। উৎপাদন, সরবরাহ সব ক্ষেত্রেই কমিশনের নিয়ন্ত্রণ জরুরী। গ্যাস দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য আলাদা তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূত্তত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে সংকট তৈরি করা হয়েছে। আর এখন সেই সংকটের মাসুল দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। তিনি বলেন, গড়ে প্রতি বছর একটা করেও কূপও খনন করা হয়নি। অনুসন্ধানে খুব একটা কাজ না হওয়াতে এখন এলএনজি আনতে হচ্ছে। যা দেশের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

শুনানিতে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন-ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, তিতাস প্রতি বছর লাভ হোক না হোক ২৫০ কোটি টাকা সরকার এবং শেয়ার মালিকদের দিচ্ছে। এজন্য তাদের অতিরিক্ত অর্থ তুলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, জ্বালানি সচিব তার অধীনের কোম্পানিগুলোর বোর্ড প্রধান। ফলে এই কোম্পানিগুলো অনেক অনৈতিক চাপ মেনে নিতে বাধ্য হয়।

তিনি জানান,  দৈনিক ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে। পুরাতন কারখানাগুলোতে ১০-১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস অপচয় হচ্ছে। এসব দিকে নজর না দিয়ে সরকারের ঝোঁক এলএনজি আমদানির দিকে।
গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকী বলেন, অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্যাস সংকট জিইয়ে রেখে এলএনজি আমদানির পথ সুগম করা হয়েছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শাহিদ আলম বলেন, এই খাতে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে। ভারত নিজেরাই তুলা উৎপাদন করে এবং যন্ত্রাংশ তৈরি করে। কিন্তু আমাদের সব কিছুই আমদানি নির্ভর। এরপরেও আমরা টিকে আছি জ্বালানির কারনে। কিন্তু ১০ বছরের ব্যবধানে যদি গ্যাসের দাম ৪০০ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখন শিল্প কারখানা বন্ধ করা ছাড়া ব্যবসায়ীদের বিকল্প উপায় থাকবে না।
তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গড়ে গ্যাসের দাম ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে। বিতরণ মার্জিন প্রতি ঘনমিটারে ২২.৬৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮৯.৮৭ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এদিকে শুনানি চলাকালে টিসিবি ভবনের সামনে গণমোর্চা ও সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি গ্যাসের দাম বাড়ানোর কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।