গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পাঁচ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। দুই চুলা এক হাজার টাকা এবং এক চুলা ৮৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রোববার বিইআরসিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দেয়া হয়।
বিইআরসি সদস্য দেলওয়ার হোসেন বলেন, এখনও শুনানীর তারিখ ঠিক হয়নি। শুনানী শেষে দাম নির্ধারণ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ি দাম বাড়ানোর সকল প্রত্রিক্রয়া মেনেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিইআরসি সূত্র জানায়, সকল কোম্পানি একই হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। দুই চুলা ১২২ শতাংশ এবং একচুলা ৮৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন বলে যুক্তি দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি., বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি আলাদা আলাদভাবে গ্যাসে দাম বাড়ানোর প্রম্তাব দিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি এখনও প্রস্তাব দেয়নি। কোম্পানিগুলো ১লা জানুয়ারি থেকে গ্যাসের নতুন দাম কার্যকর করার আবেদন করেছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাব অনুযায়ি, আবাসিক খাতে এক চুলা গ্যাসের দাম ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা এবং দুই চুলা ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবাসিকে মিটার ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রতি হাজার ঘনফুট ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা বা ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি হাজার কিউবিক ফুট ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ২৬৮ টাকা ০৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা, শিল্প গ্রাহকদের জন্য ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২২০ টাকা, চা শিল্পে ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৭৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮৪ টাকা এবং সার কারখানায় ৭২ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশনে পাইকারি দাম ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩২ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একই সাথে সাধারণের প্রতি হাজার ঘনফুট ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
পেট্রোবাংলা ৩০ অক্টোবর সকল বিতরণ কোমর পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু বিইআরসি সে প্রস্তাব যথাযথ হয়নি বলে জানায়। তারা গ্যাস বিতরণ সকল কোম্পানিকে আলাদা আলাদা প্রস্তাব দিতে বলে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর মত গ্যাসেরও আলাদা আলাদা প্রস্তাব নিয়েছে বিইআরসি। এই প্রথম গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো আলাদা আলাদা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিল।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ২০০৩ ও ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ি সংশ্লিষ্ঠ বিতরণ কোম্পানিগুলোর স্ব স্ব  অবস্থান থেকে দাম বাড়ানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ি এককভাবে সকল কোম্পানির পক্ষে একটি মাত্র প্রস্তাব জমা দিয়ে ছিল। এজন্য সেই প্রস্তাব যথাযথ হয়নি বলে বিইআরসি পক্ষ থেকে পেট্রোবাংলাকে জানানো হয়।
পেট্রোবাংলার অধীনে ৫টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ও একটি সঞ্চালন কোম্পানি আছে। এসব  কোম্পানির নিয়ন্ত্রক পেট্রোবাংলা হলেও প্রত্যেক বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি বিইআরসি থেকে আলাদা আলাদা লাইসেন্স নিয়েছে। তাই প্রতিটি কোম্পানিকে একক কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করে আলাদা আলাদা প্রস্তাব নেয়া হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জ্বালানি মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোতি চাওয়া হয়। ওই সময় তারা একটি প্রাথমিক প্রস্তাবও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়। সেপ্টম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন দেন।
এরআগে ২০০৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল।