গ্যাসের দাম বাড়িয়ে কনোকোকে পিএসসি করতে আমন্ত্রন
গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গভীর সমুদ্রের তিনটি ব্লক খনিজ অনুসন্ধানের জন্য ইজারা দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অনুরোধে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবু আরও দাম বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে তারা।
সম্প্রতি পেট্রোবাংলা আমেরিকার কনোকো ফিলিপস্ ও স্টেটওয়েলকে সমুদ্রের ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকের জন্য উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) করার জন্য চিঠি দিয়ে আমন্ত্রন জানিয়েছে। কিন্তু তারা চুক্তি করার আগে আরও একবার আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়েছে। এর আগে কনোকো গ্যাসের দাম না বাড়ানোর কারণে চুক্তি অনুযায়ি পুরো কাজ না করে সমুদ্রের গ্যাস ব্লক ছেড়ে দিয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, কনোকো ফিলিপস্ এর অনুরোধেই প্রথমে নির্ধারণ করা চুক্তির খসড়া সংশোধন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। দরপত্র আহবান করার সময় যে দাম ছিল তা সংশোধন করে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন আরও দাম বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে। প্রথমে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ছিল চার দশমিক দুই ডলার। এখন তা করা হয়েছে সাড়ে ছয় ডলার।
সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত্ মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে কনোকো ফিলিপস্ কে চুক্তি করার জন্য পেট্রোবাংলা আমন্ত্রণ জানায়। চুক্তি করার আমন্ত্রণ পাওয়ার পর অনানুষ্ঠানিকভাবে কনোকো জ্বালানি বিভাগে যোগাযোগ করেছে। তারা চুক্তির আগে গ্যাসের দাম আরও বাড়াতে চাইছে। সূত্র জানায়, চুক্তির আগে আরও একদফা আলোচনা হতে পারে। তবে আলোচনা করলেও গ্যাসের দাম আর বাড়ানো যাবে না। চুক্তির জন্য যে খসড়া তৈরী করা হয়েছে তা সংশোধন করে দাম বাড়ানো সম্ভব নয়। নতুন করে কোন কিছু পরিবর্তন করতে হলে তা অবশ্যই মন্ত্রি পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে।
উল্লেখ্য, সমুদ্রে গ্যাস বা তেল পেলে কনোকো ফিলিপস্ এর কাছ থেকে পেট্রোবাংলা কিনে নেবে। পেট্রোবাংলা কি দরে গ্যাস কিনবে তা নিয়েই দরকষাকষি হচ্ছে। ভারত ও মিয়ানমারে গ্যাসের যে দাম আছে এখানেও তা নির্ধারণ করতে চায় কনোকো।
ভারতে এই গ্যাসের দাম সাড়ে আট ডলার আর মিয়ানমারে নয় ডলার। তবে কর ও মুসকসহ বিভিন্ন যে ছাড় পেট্রোবাংলা দেয় তা ভারত ও মিয়ানমারে নেই।
চুক্তি হলে ১২ নম্বর ব্লকে তিন হাজার ৪১২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দ্বিমাত্রিক জরিপ করতে হবে। দ্বিমাত্রিক জরিপে ভাল ফল পেলে ত্রিমাত্রিক জরিপ করবে। এছাড়া একটি অনুসন্ধান কূপও খনন করতে হবে। ১৬ নম্বর ব্লকে দুই হাজার ৭৭৫ বর্গকিলোমিটার এবং ২১ নম্বরে তিন হাজার ৩৭৬ বর্গকিলোমিটার জরিপ করবে। প্রতিটি ব্লকে একটি অনুসন্ধান কূপ খননসহ খরচ ধরা হয়েছে ১০৯ মিলিয়ন ডলার বা ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। কনোকো বাংলাদেশে কোন খনিজ সম্পদ পেলে এখানে যে আয় হবে তার কোন কর দেবে না। পেট্রোবাংলা এই কর দিয়ে দেবে।
২০১১ সালে সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পিএসসি করে পেট্রোবাংলা। দুটি ব্লকে দ্বিমাত্রিক জরিপ করে। পরে পিএসসিতে গ্যাসের যে দাম নির্ধারণ করা আছে তা সংশোধন করে বাড়ানোর দাবি জানায়। পিএসসি করার পর গ্যাসের দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে আর কাজ করেনি কনোকো। এরপর ২০১২ সালে পেট্রোবাংলা নতুন দরপত্র আহবান করলে একটি ব্লকের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেয়। সে সময় কনোকো মনোনীত হলেও পরে চুক্তি করতে রাজি হয়নি। পরে ২০১৪ সালে নতুন করে দরপত্র আহবান করা হলে সে সময় কনোকোকে ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকের জন্য মনোনিত করা হয়।