গ্যাসের বাড়তি দাম আদায়ে ‘বাধা নেই’
গৃহস্থালি ও গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম দ্বিতীয় ধাপে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আটকে দিয়ে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল, তার ওপর স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
ফলে ১ জুন থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে গ্যাসের দ্বিতীয় ধাপের বাড়তি দাম আদায়ে কোনো বাধা থাকছে না।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হাই কোর্ট এর আগে যে রুল দিয়েছিল, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তার নিষ্পত্তি করতে বলেছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গৃহস্থালি ও গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়।
সেখানে বলা হয়, আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।
পাশাপাশি যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা এবং ১ জুন থেকে ৪০ টাকা হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতেও গ্যাসের দাম দুই ধাপে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয় ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে।
ভোক্তা অধিকারকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন সে সময় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানায়। বাম দলগুলো ঢাকায় হরতালও করে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের ৩৪ ধারা বলা হয়েছে, জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনো পরিবর্তন না ঘটলে কমিশন নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না।
তাদের গণবিজ্ঞপ্তিতে ওই আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে অভিযোগ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) একটি রিট আবেদন করলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের দাম বৃদ্ধির কার্যকারিতা হাই কোর্ট ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়।
সেই সঙ্গে ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে’ দেওয়া ওই গণবিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আপিলের অনুমতি চাইলে চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন গত ৩০ মে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিলের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।
এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আপিল বেঞ্চে ওঠে এবং প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ স্থগিতাদেশ বহাল রেখে হাই কোর্টে রুল নিষ্পত্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় ঠিক করে দেয়।
বিইআরসির পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম; রিটকারী সংস্থা ক্যাবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী।
অ্যাটর্নি জেনারেল পরে সাংবাদিকদের বলেন, “হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালত যে আদেশ দিয়েছিল, আপিল বিভাগ তা বহাল রেখেছে। এর ফলে ১ জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপের দাম কার্যকরে কোনো বাধা থাকল না।”