গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা দরকার
রান্না করতে গিয়ে গ্যাস সংকট এখন রোজকার সমস্যা। এই সমস্যার সাথে নতুন ঝুঁকি, দুর্ঘটনা্।দুর্ঘটনা্ যেমন পাইপের চুলায় তেমনই বোতল গ্যাসে (এলপি গ্যাস)।
বাড়ির সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে গেলে রান্নাঘরকে বাদ দেয়া যাবে না।তাই সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন সতর্ক হতে।
সংকটের কারণে অনেক সময় বোঝা যায় না চুলায় গ্যাস আছে কিনা। চুলা খোলা রাখলে, যখন গ্যাস আসবে তখন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই গ্যাস থাক আর না থাক অপ্রয়োজনে চুলা খোলা রাখা যাবে না।
সংকট থেকে রেহাই পেতে অনেকেই ঝুঁকছেন এলপি গ্যাসের দিকে।রান্নাবান্নার জন্য গ্রামাঞ্চলেও এলপি গ্যাসের ব্যবহার লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে।
একটা সাধারণ ধারণা আছে যে, গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে বিষ্ফোরণ হয়। আসলে তা নয়। গ্যাসের বোতলের মুখে সমস্যা থেকে বিষ্ফোরণ হয়। তাই গ্যাস বোতলের মুখে যন্তবান হতে হবে।
সিলিন্ডারের মধ্যে গ্যাস বেশি চাপে প্রবেশ করানো হয়, তাই এর বিস্ফারণ মারাত্মক। এর বিস্ফোরণে শক ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে।
আর এ শক ওয়েভ শরীরের যেখানেই লাগে সেখানে ব্যাপক ক্ষত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ফুসফুসের। ফুসফুসের রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে, আবার সম্পূর্ণ ফুসফুস ছিন্নভিন্নও হয়ে যেতে পারে। ঘটতে পারে প্রাণহানিও।
কিছুদিন আগে ময়মনসিংহের ভালুকায় ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলায় গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে নিহত হন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র। গত ১৩ই অক্টোবর রাজধানীর উত্তরখানে বাসার গ্যাস লাইন বিস্ফারণে দগ্ধ হন একই পরিবারের ৮ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট এবং ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, গত এক বছরে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫০টা এবং তাতে নিহত হয়েছেন ১২ জন এবং আহত হয়েছেন ৩ শতাধিক।
বিস্ফোরক পরিদফতর থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপত্তা বিষয়ে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ১. এলপি গ্যাস সিলিন্ডার খাড়াভাবে রাখতে হবে, ২. সিলিন্ডার এমন স্থানে খাড়াভাবে রাখা উচিত যেখানে যানবাহন বা মানুষ চলাচল করে না, ৩. গ্যাস সিলিন্ডারকে মেঝের সমতলে রাখতে হবে, ৪. চুলা বা অন্য কোনো এলপিজি ব্যবহার যন্ত্রকে সিলিন্ডারের চেয়ে উঁচুতে রাখতে হবে, ৫. ঠাণ্ডা ও অবাধ বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে সিলিন্ডার রাখতে হবে, ৬. প্রচণ্ড ধাক্কা বা পড়ে যাওয়া থেকে সিলিন্ডারকে রক্ষা করতে হবে, ৭. তাপ ও আগুনের উৎস এবং দাহ্য বস্তু ও গ্যাস থেকে সিলিন্ডার দূরে রাখতে হবে, ৮. গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার ও গ্যাসশূন্য সিলিন্ডার আলাদা রাখতে হবে, ৯. সিলিন্ডারকে সরাসরি সূর্যের আলো, বৃষ্টি ও তাপ থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে, ১০. কখনও বদ্ধ স্থানে সিলিন্ডার রাখা যাবে না, ১১. তাপ নির্গত হয় এমন কোনো বস্তু সিলিন্ডারের এক মিটারের মধ্যে রাখা বা ব্যবহার করা যাবে না।
এলপিজি সিলিন্ডারে রান্নার সময় দরজা-জানালা খোলা রাখতে হবে। নাইলনের জামা ব্যবহার না করে সুতি কাপড়ের অ্যাপ্রোন ব্যবহার করতে হবে। আগে ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে তারপর চুলা জ্বালাতে হবে। জ্বলন্ত চুলা থেকে পাত্র নামানো যাবে না। রান্না করা অবস্থায় চুলা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া যাবে না। রান্না শেষে প্রথমে রেগুলেটর নব ও পরে চুলার নব বন্ধ করে দিতে হবে।
এলপিজি সিলিন্ডার রক্ষণাবেক্ষণে সিলিন্ডারের সেফটি ক্যাপ সিলিন্ডারের সঙ্গে রাখতে হবে। গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডারের লিকেজ পরীক্ষা খোলা আগুন দিয়ে না করে সাবানের ফেনা দিয়ে করতে হবে। সিলেন্ডারে কোনো ক্ষতি বা আঘাতের দাগ মেরামত বা রং করে ঢেকে দেয়া যাবে না। সিলিন্ডারের কোনো ক্ষতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ফেরত দিতে হবে। একটু সচেতনতাই পারে ভয়াবহ গ্যাস দুর্ঘটনা থেকে আমাদের রক্ষা করতে।
সানজিদা সাথী : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়