চট্টগ্রামে ব্রিজ ভেঙে খালে তেলবাহী ওয়াগন
চট্টগ্রামে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস অয়েল বহনকারী একটি ট্রেনের দুটি ওয়াগন ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে গেছে। এ ছাড়া লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেনটির আরও তিন ওয়াগন। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম-দোহাজারি রেললাইনের বোয়ালখালী উপজেলার বেঙ্গুরা স্টেশনের অদূরে সায়েরারপুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনটির চালকসহ দু’জন আহত হন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ফিরোজ ইফতেখার দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে ওয়াগন থেকে খালের পানিতে তেল ছড়িয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রিজ ভেঙে যে খালের ওয়াগন দুটি পড়ে যায় সেই খালের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ রয়েছে। জোয়ার-ভাটার এ খাল দিয়ে প্রচুর পরিমাণ ফার্নেস অয়েল কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম থেকে ফার্নেস অয়েলভর্তি আটটি ওয়াগন নিয়ে ট্রেনটি দোহাজারিতে একটি পিকিং পাওয়ার প্লান্টে যাচ্ছিল। প্রতিটি ওয়াগনে প্রায় ২৫
হাজার টন ফার্নেস অয়েল ছিল। পথে বোয়ালখালী উপজেলার বেঙ্গুরা স্টেশনের কাছে একটি ব্রিজ পার হওয়ার সময় হঠাৎ রেলের ২৪ নম্বর ব্রিজটি ভেঙে ট্রেনটির দুটি ওয়াগন খালের পানিতে পড়ে যায়। এছাড়া ব্রিজের দু’পাশে আরও দুটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক) মো. শহীদুল্লাহ ও সহকারী লোকোমাস্টার মো. জাফর আহত হন। ঘটনার পরপরই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ব্রিজটি মেরামত না করা পর্যন্ত এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
এর আগেও এ লাইন দিয়ে বিদুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াগনবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
দুর্ঘটনার পর রেলের সহকারী প্রকৌশলী আবদুল হালিম ও উপসহকারী প্রকৌশলী আকবর আহমদ ফেরদৌসকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। রেলের ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দায়িত্বে ছিলেন তারা। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মো. হারুনুর রশিদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার কামরুল আহসান ও চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মিয়া জাহান। এছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে গঠন করা হয় আরও একটি তদন্ত কমিটি।
রেল কর্মকর্তারা জানান, ২০০৫ সালে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত বছর মেরামতের জন্য দরপত্রও ডাকা হয়। তবে কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার চলে যান। ঠিকাদারের করা মামলায় আদালত স্থিতাবস্থা জারি করায় সেতুটি মেরামত করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তারা।
দুর্ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম থেকে একটি ও আখাউড়া থেকে আরেকটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে একটি ইঞ্জিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে পেঁৗছে লাইনে আটকে থাকা চারটি ট্যাঙ্কার সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ‘বগিগুলো সরিয়ে ফেলার পর সেতু মেরামত করে রিলিফ ট্রেন উদ্ধারকাজ শুরু করবে। কাজ শেষ হতে কমপক্ষে দুই দিন সময় লাগবে।’ এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলার কালুরঘাটে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
সে সময় কর্ণফুলী নদীসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ তেল ছড়িয়ে পড়েছিল।