চাহিদা উৎপাদনে সমন্বয়হীনতায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। পদ্মা নদীর মাওয়া ফেরি ঘাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: এনার্জি বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাহিদা আর উৎপাদনের সমন্বয়হীনতায় বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় হয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলের ঘাটতি মেটাতে পশ্চিমাঞ্চল থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। ওই সময় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জের দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশালের একটি সার্কিট অকেজো হয়ে যায়। এতে পর্যায়ক্রমে পূর্বাঞ্চলের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র সয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ।
৪ঠা অক্টোবর গ্রিড বিপর্যয়ের প্রাথমিক তদন্তে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে আরও বলা হয়েছে, ওই সময় পূর্বাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি ছিল এবং পশ্চিমাঞ্চালে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বাড়তি ছিল। এর ফলে পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে এক হাজার ১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হচ্ছিল। ঘটনার সময় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশাল এআইএস থেকে ঘোড়াশাল জিআইএস এলাকায় ২৩০ কেভির একটি সার্কিট বিকল হয়ে পড়ে। এতে পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সি সীমা নিচে নেমে যায়। কম ফ্রিকোয়েন্সিজনিত কারণে গ্রিড অস্থিতিশীল হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে পূর্বাঞ্চালের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিকল হয়ে বিভ্রাটের সৃষ্টি করে।
গ্রিড বিপর্যয় হলেও গ্রিড সিস্টেম ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কোনো সমস্যা হয়নি। সেজন্য তদন্ত কমিটি গ্রিডের নিরাপত্তা, বিপর্যয় এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিচালনা তথ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে।
ওই দিন দুপুর ১টার দিকে ১১ হাজার ১৯৮ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১০ হাজার ১৯২ মেগাওয়াট ও ২টার দিকে ১১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১০ হাজার ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। দুপুর ২টা ৪ মিনিটে বিপর্যয় হয়।

কখন কোথায় বিদ্যুৎ আসে
ঘটনার ৩২ মিনিটের মধ্যে দুপুর ২টা ৩৬ মিনিটে সিরাজগঞ্জ-আশুগঞ্জ ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং ২টা ৪৩ মিনিটে ঘোড়াশাল জিআইএস থেকে এআইএস ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন সচল করা হয়। এরই মধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়।
পর্যায়ক্রমে ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, ভুলতা, হরিপুর, মেঘনাঘাট ও আমিনবাজার গ্রিড উপকেন্দ্রগুলো সচল করা হয়। বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বঙ্গভবন ও বিকাল ৫টা ২২ মিনিট গণভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
আশুগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ২টা ৫৮ মিনিটে ময়মনসিংহ অঞ্চল, আশুগঞ্জ-কুমিল্লা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিকাল ৩টা ৩২ মিনিটে কুমিল্লা অঞ্চল, ৫টা ১৫ মিনিটে কুমিল্লা-হাটহাজারি ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন সচল করা হয়। আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন সচলের মাধ্যমে সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে সিলেট অঞ্চল বিদ্যুৎ দেওয়া হয়।
রাত ৯টার দিকে সম্পূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় সঞ্চালন লাইন স্বাভাবিক হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করে উৎপাদন বাড়ানো হয়। রাত ১২টার দিকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করা হয়।

বিতরণ এগিছে সঞ্চালনে কম: প্রতিমন্ত্রী
কারিগরি ত্রুটির কারণে ৪ঠা অক্টোবর গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, গ্রিড বিপর্যয় হলেও সঞ্চালন লাইনের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, এরকম কারিগরি সমস্যা হতেই পারে। বিশেষ করে উপকেন্দ্রগুলোতে। আমাদের অনেক পুরোনো উপকেন্দ্র আছে। কিছু উপকেন্দ্র আছে আধুনিক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের জন্য সতর্কবাণী। পুরো ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। যত দ্রুত যেতে পারব, ততই ঝুঁকি কমে আসবে। পিজিসিবির যতটা অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বিতরণের কাজ এগিছে, কিন্তু সঞ্চালনের কাজ কম হয়েছে।