‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ নিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সন্ধ্যায় এখানে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রথম সারির নেতৃত্বে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) সর্বোচ্চ পরিবেশ বিষয়ক সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।
ইউনেপ নির্বাহী পরিচালক আচিম স্টেইনার একজন অনুপ্রেরণাদায়ক নেতা হিসেবে প্রশংসা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজ করার প্রয়োজনীয়তা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। বাংলাদেশ হচ্ছে প্রথম দেশ যারা জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং আরো অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ইউনেপ আজ সন্ধ্যায় হোটেল সিপ্রিয়ানি লো স্পেসিয়ালিতায় এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে চারজন অনুপ্রেরণাদায়ক পরিবেশ বিষয়ক নেতাদের হাতে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি, ইউনিলিভার সিইও, ব্রাজিলের কসমেটিকস প্রতিষ্ঠান ‘নেটুরা’ এবং সাউথ আফ্রিকার ব্ল্যাক মাম্বা শিকারবিরোধী ইউনিট হচ্ছে এই পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তি ও সংস্থা।
পুরস্কার গ্রহণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব যখন সকলের জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের কথা বলে তখন আমরা আমাদের পৃথিবীর সুরক্ষা ও লালনের লক্ষ্যে অঙ্গীকারের আমাদের দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত।
তিনি আরো বলেন, এই পুরস্কার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের জনগণের চেতনা ও সহিষ্ণুতার একটি স্বীকৃতি। আমি আমার জনগণের পক্ষে এই পুরস্কার গ্রহণ করছি।
তিনি আরো বলেন, তাদের সমর্থন ছাড়া এটা পুরোপুরি অসম্ভব ছিল। চলতি বছরের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) গুডউইল অ্যাম্বাসেডর অভিনেতা আয়ান সোমারহালডার, মডেল গিসেল বুন্ডশেন ও অভিনেত্রী নিকি রীড।
অনুষ্ঠানে নতুন গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ সমর্থন করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রথম সারির নেতৃত্বে অবদান রাখার জন্য পলিসি লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি ১০০ বছর ধরে জীবনধারা পরিবর্তন বিষয়ক বিজ্ঞান, অনুসন্ধান ও গল্পবলার জন্য বিজ্ঞান ও উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার পেয়েছে।
টেকসই, সুষম ও পরিবেশ সচেতন ব্যবসা একটি চৌকস ব্যবসা বলে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য উদ্যোগী পরিকল্পনা ক্যাগাগরিতে ইউনিলিভার এই পুরস্কার পেয়েছে। নেটুরা (ব্রাজিলের কসমেটিকস প্রতিষ্ঠান), টেকসই ব্যবসার মডেলে নতুনত্ব আনার অঙ্গীকারের জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন।
ব্ল্যাক মাম্বা শিকারবিরোধী ইউনিট কমিউনিটি পর্যায়ে অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসা রোধ করার অসামান্য সাহসিকতা প্রদর্শন করার জন্য অনুপ্রেরণা ও পদক্ষেপ ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশ কখনো বিদেশী তহবিলের জন্য অপেক্ষা করেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলো পর্যাপ্ত অর্থ দেয়ার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার বজায় রাখবে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার নিজস্ব বাজেট থেকে ঝুঁকি মোকাবেলার লক্ষ্যে ব্যবস্থা রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সময়োচিত দায়িত্ব হিসেবে পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় বিশ্বাসী। পুরস্কার গ্রহণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা ব-দ্বীপে শত শত বছরে বাঙালির বিশ্বাস, চর্চা ও সংস্কৃতি থেকে তা উঠে এসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতিকূল প্রভাব স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিদ্যমান হুমকি মোকাবেলার লক্ষ্যে নিজস্ব সম্পদ আহরণ ও জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উদ্ভাবনী জনগণ ও স্থানীয় সমাধান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনেছে।
তিনি বলেন, ৪০ লাখ বাড়িতে সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম ‘সোলার জাতি’ হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধি জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির হার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এটি উন্নয়নের আরেকটি অভূতপূর্ব নজির।
ইউনেপ নির্বাহী পরিচালক আচিম স্টেইনার বলেন, এই সপ্তাহান্তে আমরা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করেছি। ১৯৩টি দেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ গ্রহণ করার মাধ্যমে এই পৃথিবী ও তার মানুষের জন্য একটি টেকসই পথে অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার করেছে।এটি একটি বড় সাফল্য তবে এখন কঠিন কাজ শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের সকল দিক সমন্বিত করে গৃহীত ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।
জাতিসংঘ ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার গ্রহণকারী ৫জন প্রমাণ করেছে যে সকলের জন্য একটি সুষম টেকসই ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব।
পরিবেশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব রাখার জন্য সরকার, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতে নেতাদের ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। ৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই পুরস্কার নীতি, বিজ্ঞান, ব্যবসা ও সুশীল সমাজ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন দেশের নেতা থেকে তৃণমূলের আন্দোলন কর্মীদের মধ্যে ৭২ জনকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।