জামালগঞ্জ কয়লাখনিতে সিবিএম পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে না

জামালগঞ্জ কয়লা খনি থেকে কোলবেড মিথেন (সিবিএম) পদ্ধতিতে গ্যাস তোলার যে সম্ভাবনার কথা চিন্তা করা হচ্ছিল সেই গ্যাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ভূগভস্থ পদ্ধতিতে (আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং) এ খনি থেকে কয়লা তোলা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
প্রতিটি কয়লাখনিতে প্রাকৃতিকভাবে মিথেন গ্যাস থাকে। খনিতে কূপ খনন করে সেই গ্যাস তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যায়। কয়লাখনি থেকে গ্যাস তোলার এই পদ্ধতিকে বলা হয় কোল বেড মিথেন বা সিবিএম।
জামালগঞ্জ কয়লাখনিতে কী পরিমাণ গ্যাস থাকতে পারে, তা উত্তোলনযোগ্য কিনা তা যাচাই করে দেখার জন্য পেট্রোবাংলা ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাইনিং অ্যাসোসিয়েটস প্রাইভেট লিমিটেডকে কাজটি দেয়। গত ৫ জানুয়ারি থেকে তারা সম্ভ্যবতা যাচাইয়ে কাজ শুরু করে।
সম্প্রতি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ভারতীয় কোম্পানিটি। কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানায়, এই কয়লাখনিতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ খনির কয়লা থেকে ১০ শতাংশের বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে না। বাণিজ্যিকভাবে এই গ্যাস তোলা ঠিক হবে না। পাশাপাশি এ বিষয়ে আরো সম্ভ্যবতা যাচাই না করতেও তারা অনুরোধ করেছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে ভারতীয় কোম্পানিটি এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। এ সময় জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী, পেট্রোাবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খনিটিতে গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ ও খনির অভ্যন্তরে গ্যাস চলাচলের ব্যবস্থা (পারমিঅ্যাবিলিটি) খতিয়ে দেখতে তাঁরা তিনটি কূপ খনন করে। কূপ খননের মাধ্যমে এ খনির কয়লা খনির কয়লার ঘনত্ব, গভীরতা, গ্যাসের পরিমাণ ও গ্যাসের বিস্তরণ যাচাই করা হয়। এই তথ্যগুলোর ওপর নির্ভর করে জামালগঞ্জ কয়লাখনিতে সিবিএম পদ্ধতিতে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে কিনা। সবকিছু যাচাই করে দেখা গেছে, এ খনিতে কয়লার ঘনত্ব অনেক বেশি। এতে কিছু গ্যাসের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উত্তোলনযোগ্য নয়। তবে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং এর মাধ্যমে এ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা যেতে পারে বলে তারা মনে করছে। এদিকে পেট্রোবাংলার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লা পরিমাণ বেশি হলেও গভীরতা এত বেশি যে, এই খনি থেকে কয়লা তোলাটা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয়।
পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, খনির গভীরতা অনেক বেশি। এ খনি থেকে কয়লা তোলা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে না বলেই সিবিএম পদ্ধতিতে গ্যাস তোলার সম্ভ্যবতা যাচাই করা হয়েছে। সিবিএমও যদি এই খনির জন্য কার্যকর না হয় তাহলে খনিটি ফেলে রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় রইলো না। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি কোনো নতুন পদ্ধতি পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আবার এ খনিতে চেষ্টা করা হবে।
জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জে প্রায় ১০০ কোটি মেট্রিক টন কয়লা আছে বলে ধারণা করা হয়। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত দেশের সবচেয়ে বড় খনি এটি। দেশের অন্য খনিগুলোতে কয়লার অবস্থান যেখানে ১৫০ থেকে ৫০০ মিটার গভীরতার মধ্যে, সেখানে জামালগঞ্জে কয়লার অবস্থান ৬৪০ থেকে ১ হাজার ১৫৮ মিটার গভীরে। গভীরতরা কারণে এ খনি থেকে উš§ুক্ত পদ্ধতি বা ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার কথা না ভেবে সেখানে সিবিএম পদ্ধতি যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
বর্তমানে বিশ্বের বহু দেশে সিবিএম পদ্ধতিতে কয়লা খনি থেকে মিথেন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সিবিএম পদ্ধতিতে গ্যাস উত্তোলন করছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারতেও সিবিএম পদ্ধতি চালু আছে। তবে বেশিরভাগ জায়গাই এখনো পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিবিএম চালু করা হয়েছে।