জ্বালানি বিনিময়ে এবার মিয়ারমারের সাথে সমঝোতা
জ্বালানি বিনিময়ে এবার মিয়ানমারের সাথে সমঝোতা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস দেয়া নেয়া হবে এই সমঝোতার মুল বিষয়। দ্রুত সময়ের মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা সই হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারকের খসড়া তৈরী করেছে।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সমঝোতা স্মারকের খসড়া তৈরী করা হয়। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ভারতের মত মিয়ানমারের সাথেও জ্বালানি বিনিময়ে সমঝোতা করা হবে। বাংলাদেশ প্রয়োজনমত বিদ্যুৎ অথবা গ্যাস সেখান থেকে আমদানি করবে। আবার উবৃত্ত থাকলে রপ্তানি করা হবে। মিয়ানমারে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবে। অথবা সেখানের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আমদানি করা হবে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ি উভয় দেশের জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোই হবে মূল লক্ষ। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে যৌথভাবে কাজ করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, সার্ক চুক্তি অনুযায়ি মিয়ানমারের সাথে জ্বালানি বিনিময় করা হবে। তবে এর বাইরেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সমঝোতা করা হবে।
সিউ টাং ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড রাখাইনে ৫০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে সেখান থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে প্রাথমিকভাবে জ্বালানি বিনিময় শুরু করা হবে। এছাড়া দাতাং নামে আরও একটি কোম্পানি মিয়ানমারে কেন্দ্র স্থাপন করে সেখান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে মায়ানমার ৪১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। ২০৩১ সালের মধ্যে তারা ২৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এরমধ্যে ২০টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যেতে পারে যা থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। কিন্তু মিয়ানমারের এত বিদ্যুতের চাহিদা না থাকায় তারা রপ্তানি করবে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম গত জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার সফর করেন। সে সময় মিয়ানমার থেকে বিদ্যুত আমদানির বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা হয়। এর আগেও বহুবার মিয়ানমারের সাথে জ্বালানি বিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তার আনুষ্ঠানিক কোন বাধ্যবাধকতা তৈরী হয়নি। এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি হতে যাচ্ছে। ২০০৭ সালেই দুই দেশ বিদ্যুৎ কেনা বেচার বিষয়ে সম্মত হয়।
মিয়ানমার থেকে ২০০৫ সালে গ্যাস আনার সুযোগ তৈরী হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতায় তা আনা সম্ভব হয়নি।
সমঝোতার পর যৌথভাবে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হবে। তারা সঞ্চালন লাইন করতে পথ নির্বাচন করবে।
কক্সবাজারের দক্ষিণে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ভেতরে জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রি করতে চায় তারা। অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশই এই বিদ্যুতের একমাত্র উত্তম বাজার।
মিয়ানমারে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি। এছাড়া মিয়ানমার তার সীমান্ত এলাকায় যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে সেখান থেকে সঞ্চালন লাইন তৈরি করে দেশের ভেতরে বিদ্যুৎ নেয়াটা ব্যয়বহুল। মিয়ানমারে প্রায় ১০০ নদী আছে যার মধ্যে ২০০ স্থানে জল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সম্ভব।