গ্রিড লাইন শেষ: দামে অমতৈক্যে আমদানি হচ্ছে না

সকল প্রক্রিয়া শেষ হলেও দামের কারণে ভারতের ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ আমদানি করতে দুই দেশের মধ্যেই গ্রিড লাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। গ্রিড লাইন পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছে। কিন্তু দাম নির্ধারণ না হওয়ায় বিদ্যুৎ আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।
ভারতের ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার কথা। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারত এখনো মতৈক্যে পৌছাতে পারেনি। এখনও দরকষাকষি চলছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দাম নির্ধারনের জন্য আলোচনা চলছে। দ্রুত এবিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকার বিদ্যুতের যে দাম বলছে তা আমাদের জন্য একটু বেশি। তারা বলছে, পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অনেক দূরে অবস্থিত, ওখান থেকে সঞ্চালন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে দিতে হলে খরচ বেশি পড়বে। এজন্য বেশি দাম চাইছে।
সূত্র জানায়, ভারতের ত্রিপুরার বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের জন্য একটি যৌথ কমিটি করা হয়েছে। কমিটি এবিষয়ে আলোচনা করছে।
ভারত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রথমে চেয়েছিল নয় সেন্ট। পরে এক সেন্ট কমিয়ে আট সেন্ট করে দিতে সম্মত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ছয় সেন্ট দিয়ে কিনতে চায়। উভয় দেশ এখন পর্যন্ত আট ও ছয় সেন্ট এর মধ্যে স্থির আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর বেশি দাম দিতে সম্মত হচ্ছে না। ভারত চাইছে আট সেন্টের কমে বিদ্যুৎ দেবে না। পালাটানায় গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ হিসেবে প্রতি ইউনিটের দাম আট টাকা বেশি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা।
বর্তমানে ভেড়ামারা দিয়ে যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে তার মধ্যে ভারত সরকারের কাছ থেকে কেনা ৪৫০ মেগাওয়াটের দাম প্রতি ইউনিট সাড়ে চার সেন্ট। আর বেসরকারিভাবে খোলা বাজার থেকে কেনা ৫০ মেগাওয়াটের দাম সাড়ে ৫ সেন্ট করে। এই হিসাবেও ত্রিপুরার বিদ্যুতের দাম বেশি।
চলতি ডিসেম্বর মাসেই ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দামের সিদ্ধান্তের অভাবে তা হল না। সূত্র জানায়, সে কোন মুহুর্তে দাম নির্ধারন চ‚ড়ান্ত হলেই এই বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে।
পিজিসিবি জানায়, গত ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অংশের উচ্চচাপের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করে তা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি. (পিজিসিবি) নির্মিত এ লাইনে ১৩২ কেভি ভোল্টেজ দিয়ে বিদ্যুতায়িত অবস্থায় রাখা হয়েছে। ত্রিপুরা-কুমিল্লা উপকেন্দ্র গ্রিড আন্তঃসংযোগ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ও পিজিসিবির অর্থায়ণে মোট ৪৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে কুমিল্লা (উত্তর)  সাবস্টেশন থেকে সীমান্ত  পর্যন্ত ৪০০ কেভি ক্ষমতার ২৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং কুমিল্লা (উত্তর) – কুমিল্লা (দক্ষিণ) সাবস্টেশন পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার ১৩২ কেভি  ক্ষমতার  সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছে। এ লাইন স্থাপনে খরচ হয়েছে ১৭২ কোটি টাকা। লাইন বিদ্যুতায়িত করে রাখার কারণে সবাইকে এ লাইন ও টাওয়ারগুলো থেকে কমপক্ষে ১৫ মিটার নিরাপদ দূরুত্বে অবস্থা করতে সতর্ক করা হয়েছে। অন্যদিকে জানা যায়, ভারতীয় অংশের সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।