দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নেমেছে আরইবি
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়া, নতুন যন্ত্রাংশ কেনা, উপকেন্দ্র স্থাপন, বিদ্যুতের লাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজে আরইবিতে দুর্নীতি হচ্ছে। এসব দুর্নীতি আর ঘুষ লেনদেন থেকে বের হয়ে আসতেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নেমেছে আরইবি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরইবি কার্যালয়গুলোসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় দুর্নীতিবিরোধী প্রায় ৩০ লাখ পোস্টারে ছেয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসব পোস্টারে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি করব না। দুর্নীতি সইব না। ঘুষ দেব না। ঘুষ নেব না। ঘুষ দিলে আরইবিতে কোনো কাজ হয় না। ঘুষ নিয়ে কেউ বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে না। দালালকে ঘুষ দেবেন না। রসিদ ছাড়া কোনো টাকা দেবেন না।’
আরইবিতে একটি চক্র গ্রামের সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করছে। চক্রটি নানাভাবে নতুন বিদ্যুতের সংযোগ দিতে এবং মিটার টেম্পারিং করার কাজ করছে। এই চক্রের মধ্যে আছেন স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আরইবির কর্মকর্তা, সমিতির নির্বাচিত সদস্য, আরইবি লাইসেন্সধারী কারিগরি প্রতিনিধি ও এক শ্রেণীর দালাল।
এছাড়া বিভিন্ন কেনাকাটায় সরাসরি দুর্নীতি করছেন অসৎ কর্মকর্তারা।
আরইবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দীন এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে পোস্টার এনে পুরো আরইবি কার্যালয়ে টানিয়ে দিয়েছি। মানুষের মধ্যে এর মাধ্যমে সচেতনতা আসবে। চোখের সামনে এমন পোস্টার দেখে কেউ আর সহজে দুর্নীতি করতে চাইবে না। গ্রাহক নিজে সচেতন হবে। কর্মকর্তাকেও সচেতন করবে। তিনি বলেন, আরইবিতে এমন কোনো কাজ নেই যা নিয়মের বাইরে হচ্ছে। কেউ ঘুষ দিলেও সে তার সুবিধা পাবে না। নিয়ম অনুযায়ী কাজ হবে। শুধু শুধু টাকা দেওয়া হবে।
আরইবি চেয়ারম্যান মঈন উদ্দীন দুর্নীতির কথা স্বীকার করে বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্তরে স্তরে দুর্নীতি হচ্ছে। এতে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় সমিতির উপদেষ্টা, পরিচালক ও লাইনম্যানরা বাড়ি গিয়ে সংযোগ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিচ্ছে। এর সঙ্গে আরইবি কর্মকর্তারাও জড়িত। দুর্নীতি বন্ধে শপথ পাঠ করেছি। মাথা ঠিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এই দুর্নীতি আর হতে দেওয়া হবে না। এ জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। পোস্টার ছাপানো এবং লাগানো হয়েছে। ডিস চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যাদের সংযোগ প্রয়োজন তারা যেন আবেদন করেন। কাউকে কোনো টাকা যেন
না দেন।
সম্প্রতি আরইবি প্রধান কার্যালয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শপথ নিয়েছেন সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সমস্বরে তারা বলেন, ‘এই মর্মে শপথ করছি যে, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কিংবা সমিতিসমূহের যাবতীয় মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নেব।
আমি কোনো সরবরাহকারী কিংবা প্রতিনিধির কাছ থেকে কোনো প্রকার আধিত বা অন্য কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেব না এবং কাউকে অনৈতিকভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে দেব না।
আমি কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, হয়রানি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেব না এবং কাউকে এ কাজে সহায়তা করব না। আমি ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও হয়রানির ঊধর্ে্ব উঠে বিদ্যুৎ গ্রাহক ও সংযোগপ্রত্যাশীদের প্রতি আমার দায়িত্ব পালন করব।’