নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব ৪৭টি খাতে বিনিয়োগে দেশের ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল সুবিধা নিতে পারবে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং ও সিএসআর ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে কৃষি ও কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতেও একই সুবিধা পেয়েছে শরিয়াহ্সম্মত ব্যাংকগুলো। পুনঃঅর্থায়ন প্রাপ্তিতে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে, খেলাপি ঋণ মোট বিনিয়োগের ১০ শতাংশের কম থাকা, ঝুঁকির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে মূলধন পর্যাপ্ততা, একক গ্রাহক বা গোষ্ঠীর ঋণ সুবিধার সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘন না করা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অর্থপাচার প্রতিরোধের বিধি-বিধান পরিপালন করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গ্রাহকের অনুকূলে অর্থায়নের বিপরীতে শতভাগ পুনঃঅর্থায়ন দেয়া হবে। যার মুনাফার হার প্রচলিত ব্যাংক হার ও মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাবের গড় মুনাফার হারের যোগফলের বেশি হবে না। তহবিলের মেয়াদ ও গ্রেস পিরিয়ড প্রচলিত ব্যাংকগুলোর অনুরূপ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রমতে, তফসিলি ব্যাংকগুলোর ফান্ডেড ঋণ তথা মোট বিনিয়োগের ৫ শতাংশ প্রত্যক্ষ পরিবেশবান্ধব খাতে ব্যয় করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোকে ৩ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ঋণের ৪ শতাংশ এ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে বার্ষিক এ লক্ষ্যমাত্রা কার্যকর করা হবে। যা ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৫ শতাংশ নির্ধারিত হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, টেকসই ব্যাংকিংয়ের জন্য পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয় সংকুলান একটি দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির সঙ্গে উপযোগী পরিবেশ রক্ষায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান প্রচেষ্টা আরও দ্রুত হারে বেগবান করার জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে আগামী জানুয়ারি, ২০১৫ হতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের পরিবেশ বান্ধব খাতে অর্থায়নের জন্য তাদের মোট বার্ষিক ফান্ডেড ঋণ বা বিনিয়োগ বিতরণের ন্যূনতম এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমে কাংক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তাদের ক্যামেলস্ রেটিংয়ের মূল্যায়নে বিবেচিত হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর পরিবেশবান্ধব অর্থায়নে প্রত্যক্ষ ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (২০১৩ সালে সংশোধিত) ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ অনুসারে সেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের পূর্বে তফসিলিভূক্ত ব্যাংকসমূহের ২০১৫ সালের জন্য তাদের বিতরণকৃত মোট ফান্ডেড ঋণ বা বিনিয়োগের ৫ শতাংশ ও ২০১৩ সালের পরবর্তী তফসিলিভূক্ত ব্যাংকসমূহের জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫ সালের বিতরণকৃত মোট ফান্ডেড ঋণ বা বিনিয়োগের ৩ শতাংশ পরিবেশবান্ধব খাতে বিতরণ করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫ সালের জন্য তাদের বিতরণকৃত মোট ফান্ডেড ঋণ বা বিনিয়োগের ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ২০১৬ হতে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা তাদের বিতরণকৃত মোট ফান্ডেড ঋণ বা বিনিয়োগের ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ করতে হবে। কেবলমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব পণ্য খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে উপরোক্ত হার প্রযোজ্য ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।