সুন্দরবনে জাহাজ ডুবি: হুমকিতে ডলফিন
সুন্দরবনের ভেতরে জ্বালানি তেলবাহি জাহাজ ডুবিতে বড় ধরণের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করা হচ্ছে। ঘটনার পর বন বিভাগের পাশাপাশি বন্য প্রাণীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি;র সদস্যা সুন্দরবনে অবস্থান করছে। যেখানে তেল ছড়িয়ে পড়েছে সেই এলাকাটি সরকার ঘোষিত ডলফিনের অভয়ারণ্য। এ ছাড়া সুন্দরবন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য এবং জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি।
প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী বলেন, বিভিন্ন সময়ে এই নৌপথটি বন্ধের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়বে জানানো হয়েছে। এই তেল সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। নৌ মন্ত্রণালয়ের উচিত জাহাজটি দ্রুত উদ্ধার করা।
পুর্ব সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবি ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার ক্যাপ্টেল্টন গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এছাড়া সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মাইনুদ্দিন হাসান ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের খুলনার অভ্যন্তরীণ জাহাজ পরিদর্শনালয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ আবু জাফর মিয়া।
এদিকে বুধবার সচিবালয়ে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের জানান সাড়ে ৩ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ২ জাহাজ মালিকের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপুরণ মামলা করেছে বনবিভাগ। তিনি বলেন, এ কমিটি দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা কীভাবে রোধ করা যায় তার সুপারিশ দেবে। ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নৌমন্ত্রী জানান, যে জাহাজের ধাক্কায় নোঙরে থাকা তেলবাহী জাহাজ এম. টি সাউদার্ন ওটি-৭ ডুবে যায়, সেটি শনাক্ত করা গেছে। তেলবাহী জাহাজ এম টি টোটাল এর ধাক্কায় ঐ জাহাজটি ডুবে যায়। এ তেলবাহী জাহাজের মালিকসহ সংশ্লিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পূর্ব) মো. আমীর হোসেন চৌধুরী জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এমটি সাউদার্ন ওটি-৭ নামের ট্যাংকারটি গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস তেল নিয়ে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ‘টোটাল’ নামে একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাউদার্ন স্টারের একপাশের খোল ফেটে যায় এবং সেটি ডুবতে শুরু করে। ট্যাংকারটির প্রায় সব ফার্নেস অয়েল বেরিয়ে মঙ্গলবারই সুন্দরবনের শেলা নদীর অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন বন কর্মকর্তারা।
ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটি উদ্ধারে বেসরকারি তিনটি জাহাজ নিয়ে কাজ শুরু করেছে এর মালিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারুণ অ্যান্ড কোং। বুধবার সকাল থেকে দুটি জাহাজ দুই দিক থেকে এমটি সাউদার্নকে আটকে রেখেছে, যাতে সেটি পুরোপুরি তলিয়ে না যায়। এছাড়া নৌবাহিনীর দুটি এবং বিআইডব্লিউটিএর দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
তেলের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে বুধবার বেলা একটার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা হয়েছে জাহাজ কাণ্ডারি-১০। জাহাজটির বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছার কথা। বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজটিতে ১০ হাজার লিটার তেলের দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী রাসায়নিক অয়েল ডিসপারসেন্ট রয়েছে। কাণ্ডারি-১০ থেকে এই রাসায়নিক ছিটিয়ে দেয়া হবে পানিতে ভাসমান তেলের ওপর। এতে তেলের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বন্দরের বোর্ড সদস্য কমোডর এম শাহজাহান জানান, কাণ্ডারি-১০ জাহাজটিতে যে পরিমাণ রাসায়নিক রয়েছে, তা ব্যবহার করে অন্তত ৫০০-৬০০ মেট্রিক টন তেলের দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।