পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটে ৫৭ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি পাইকারি পর্যায়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ৫৭ পয়সা বা ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ করে বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
সোমবার বিইআরসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত শুনানীতে এই সুপারিশ করা হয়। এদিকে বিদ্যুতের দামের হিসেবের মধ্যে মোট বড় রকমের গোঁজামিলের হিসেব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ক্যাব।
বিদ্যুৎ উন্নয়ণ বোর্ড (বিউবো) পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৮৭ পয়সা (ইউনিট) হারে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাবের ওপর শুনানী হয়েছে।
বিউবো চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি এই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেয় বিইআরসিতে। তখন ৭২ পয়সা হারে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলো। এরপর বেশ কয়েকমাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ৮৭ পয়সা হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করেন বিউবো।
কারিগরি কমিটি তাদের সুপারিশে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ানোর জন্য বেশি দামের জ্বালানিকে দায়ি করেছে। কমিটি বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি সরবরাহ করলে এক হাজার ৮৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা সাশ্রয় সম্ভব হতো। এর ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৩২ পয়সা কমে আসতো। দেশে দ্বৈত জ্বালানিতে চালিত এক হাজার ৮০৮ মেগাওয়াটের বিদ্যুতের মধ্যে ৮০৮ মেগাওয়াট ডিজেল দিয়ে চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে আরপিসিএল এর ১৪৯ মেগাওয়াট এবং মেঘনাঘাটে সামিট পাওয়ারের ৩০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গ্যাসে চালানো সম্ভব হলে ইউনিট প্রতি জ্বালানি সাশ্রয় হতো ১৩ দশমিক ১২ টাকা। এছাড়া পিডিবির প্রায় ৪০ বছরের পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় পড়ছে ৩৭ শমিক ৪৮ টাকা। এসব কেন্দ্রের বন্ধ করা হলেও বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় কমানো সম্ভব।
শুনানিতে পিডিবির পক্ষে চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, পুরাতন কেন্দ্র সংস্কারের নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জ্বালানি সংকটের কথা বিবেচনা করলে তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প নেই। কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছি। তবে তা সময় সাপেক্ষ।
বিউবোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ইউনিট প্রতি ৫ দশমিক ৭২ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বর্তমানে ইউনিট প্রতি ৪ দশমিক ৮৫ টাকা হারে বিক্রি করছে। এতে বিউবোর ইউনিট প্রতি লোকসান হচ্ছে ৮৭ পয়সা। সে কারণে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন।
পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভর্তুকির কথা বলা হলেও তা না দিয়ে ঋণ দেয়া হয়েছে। এতে ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। যার সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এতে করে বিউবো দিনদিন সংকটে পড়ছে।
এখন সংকট কাটতে অবচয় তহবিল থেকে খরচ মেটাতে হচ্ছে। অবচয় তহবিলে ২২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা জমা থাকার কথা। কিন্তু জমা আছে ৩১৯ কোটি টাকা। অর্থ সংকটের কারণে ওভারহোলিং রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ব্যহত হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
শুনানী পরিচালনা করেন কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এসময় কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আজিজ খান, মিজানুর রহমানসহ অন্যরা।
ভোক্তাদের পক্ষে দাম না বাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর সুপারিশ করা হয়।
শুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, পিডিবিকে নতুন করে তেলের ব্যবসায় না জড়িয়ে বিপিসির কাছ থেকে যেন কম দামে তেল সরবরাহ পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যুতের দামের হিসেবের মধ্যে মোট বড় রকমের গোঁজামিলের হিসেব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম নিয়ে শুনানি শুরু হবে।