পিডিবির লোকসানের ৭০ ভাগই ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের
পিডিবির লোকসানের ৭০ ভাগই ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কারণে হচ্ছে। ভাড়ায় আনা কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে প্রতিমাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে পিডিবি। অথচ প্রতিমাসে গড়ে মোট লোকসানের পরিমান ৬০০ কোটি টাকা। বেশি দামে কিনে কম দানে বিক্রির জন্য এই লোকসান হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, লোকসানের ৭০ ভাগ কারণ ভাড়ায় আনা কেন্দ্র হলেও উৎপাদনে এর অবদান ২০ ভাগ। তাও সব সময় নয়। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ২০ ভাগ উৎপাদন হয় ভাড়ায় আনা কেন্দ্র থেকে। অন্য সময় মোট উৎপাদনের ১০ ভাগে নেমে আসে।
পিডিবির মার্চ ও এপ্রিল মাসের হিসাবে দেখা গেছে, বেশি দামে কিনে কম দামে বিত্রিক্রর জন্য এক হাজার ৬০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এরমধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, ভাড়ায় আনা, দ্রুত ভাড়ায় আনা ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কেনার কারণে এই লোকসান হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, মার্চ মাসে লোকসানের পরিমাণ ৫৮০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এরমধ্যে শুধু দ্রুত ভাড়ায় আনা কেন্দ্রগুলোর কারণে লোকসান হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যা মোট লোকসানের প্রায় ৬৮ ভাগ। এছাড়া ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ, ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর কারণে ২০ কোটি ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
এপ্রিল মাসে এই লোকসানের পরিমাণ ছিল ৫৪৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে দ্রুত ভাড়ায় কেন্দ্রগুলোর কারণে লোকসান হয়েছে ৩৪৮ কোটি ২০ লাখ। যা মোট লোকসানের ৬৩ ভাগ। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে ১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ভাড়ায় আনা কেন্দ্রর কারণে তিন কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং আইপিপি থেকে ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত লোকসানের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এই টাকা অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে ৩৬২ কোটি ২৫ লাখ, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৫৪৭ কোটি ১৪ লাখ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৫৭৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এই তিনমাসের মোট লোকসান হয়েছে এক হাজার ৪৮৪ কোটি সাত লাখ টাকা।
প্রতিমাসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল শোধ করতে হয় পিডিবিকে। এই টাকা পিডিবি অর্থমন্ত্রনালয় থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করে। তবে পিডিবি এই অর্থ ঋণ না নিয়ে ভর্তুকি হিসেবে পেতে চাই। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) অর্থমন্ত্রনালয়কে এই অর্থ ভর্তূকি হিসেবে দেয়ার সুপারিশ করেছে।
পিডিবি সূত্র জানায়, বর্তমানে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় গড়ে সাত হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এরমধ্যে দ্রুত ভাড়ায় আনা ও ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। যা মোট উৎপাদনের ২০ ভাগ। ১১ জুন সন্ধ্যায় সাত হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এরমধ্যে দ্রুত ভাড়ায় আনা কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ১৭০ মেগাওয়াট এবং ভাড়ায় আনা কেন্দ্র থেকে ৪৪২ মেগাওয়াট। যা মোট উৎপাদনের ২১ ভাগ।