পুঁজিবাজারে যাচ্ছে সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি
বিদ্যুৎখাতের সকল সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হচ্ছে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থানীয় পুঁজি বিনিয়োগের জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো পুজিবাজারে যেতে কী কী লাগবে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরুর এক মাস পরে প্রতিবেদন জমা দেবে।
বুধবার বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পুঁজিবাজার থেকে আপাতত একবিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সভা সূত্র জানায়, বিদ্যুৎখাত উন্নয়নে যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে তার বিনিয়োগের একটি অংশ পুঁজিবাজার থেকে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে কমিটি গঠন করা হল। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে অর্থ মন্ত্রনালয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এই কমিটিতে থাকবেন। কমিটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে পুঁজিবাজারে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। প্রতিবেদনের আলোকে পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ১২টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদরে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম এবং পুঁজিবাজার, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রনালয়সহ বিভিল্পু সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎখাতের সকল কোম্পানিকে পর্যায়ক্রমে পুঁজিবাজারে নিয়ে যাওয়া হবে। এতে তাদের নিজস্ব অর্থের আর সমস্যা হবে না। বিদ্যুতে স্থানীয় পুঁজি বিনিয়োগ হবে। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
বর্তমানে বিদ্যুৎখাতের মাত্র দুটো কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে আছে। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। তবে এই কোম্পানির সকল শেয়ার বাজারে ছাড়া হয়নি। বর্তমান বাজারদরে ডেসকো পুঁজিবাজার থেকে আরও ৬১৫ কোটি টাকা এবং পিজিসিবি ৩৯০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পারে। এই দুই কোম্পানির বাড়তি শেয়ার বাজারে ছাড়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ডিপিডিসি এবং পিজিসিবি’র মাত্র ২৫ ভাগ শেয়ার পুঁজিবাজারে আছে। বাকি অংশের মালিক সরকারের পক্ষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিদ্যুৎখাতের নয়টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত। এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন দুই হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে সামিট পাওয়ার ৭৮৭ কোটি টাকা, পিজিবিসি ৪৬০ কোটি টাকা, ডেসকো ৩৭৮ কোটি টাকা, খুলনা পাওয়ার ৩৬১ কোটি টাকা, ইউনাইটেড পাওয়ার ৩২৯ কোটি টাকা, আল বারাকা পাওয়ার ১৫৩ কোটি টাকা, সামিট পূর্বাচল পাওয়ার ১৫২ কোটি টাকা, শাহজিবাজার পাওয়ার ১৩৩ কোটি টাকা এবং জিবিবি পাওয়ারের পরিশোধিত মূলধন ৮৪ কোটি টাকা।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেঘনা পেট্রোলিয়াম, তিতাস গ্যাস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্ট ও যমুনা অয়েল বাজারে বাড়তি শেয়ার বিক্রি করে।
২০১০ সালের ডিসেম্বরের পর জ্বালানি খাতের লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানিকে দ্রুত তালিকাভূক্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়নি।