প্রথম বেসরকারি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের প্রথম বেসরকারি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। সোমবার রাতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। প্রথম ধাপে একটি ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের ১৪ই জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখানে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুইটি ইউনিট আছে। প্রথম ইউনিট থেকে ২৪ শে মে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছিল ২৮শে জুন।
এবার পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেল এস আলম গ্রুপ এবং চীনা কোম্পানি সেপকোথ্রি ও এইচটিজি এর মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার এর একটি ইউনিট।
এসএস পাওয়ার এর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ইবাদত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, পিডিবি ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় সফলভাবে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পেরেছি। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যুক্ত করতে পেরেছি। এই বিদ্যুৎ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করতে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস করি।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশি-বিদেশি অর্থায়নে দেশের প্রথমবৃহৎ বেসরকারি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ্যাৎ ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে এখানে। বেসরকারি একক বিনিয়োগ হিসেবে এটা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এতে এস আলম গ্রুপের অংশীদারিত্বের পরিমাণ ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশের মালিকানায় আছে চীনা কোম্পানি সেপকোথ্রি ও এইচটিজি।
এটি পুরোপুরি উৎপাদনে থাকলে দেনিক প্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ইউনিট ও মাসে প্রায় ৮৮ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সইয়ের পর ২০১৬ সালে যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শিজিনপিং।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনী আছে। সাগরে করা হয়েছে বিশেষায়িত জেটি। যেখানে ঘণ্টায় দুই হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাস করা যাবে। কয়লা মজুদাগারের সাথে যুক্ত দু’টি কনভেয়ার বেল্টের সক্ষমতা চার হাজার টন। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ঢাকনা যুক্ত কনভেয়ার বেল্ট বসানো হয়েছে। কয়লা মজুদাগারের চারপাশে দেওয়া হয়েছে উঁচু নেটের ঘেরা। দু’টি উন্নতমানের এফজিডি (ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন) নির্মাণ হয়েছে অনেক আগেই। ছাই সংরক্ষণের জন্য ২টি সাইলে নির্মাণ করা হয়েছে। যার প্রত্যেকটির ধারণ ক্ষমতা দুই হাজার ৬শ’ টন। ছাই রাখার পুকুর করা হয়েছে ৮০ একর জায়গা জুড়ে। সাইক্লোন কিংবা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রাচীর।
বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে বাঁশখালীর (চট্টগ্রাম) গণ্ডামারা এলাকায় ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে।