বছরে হাজার কোটি টাকা খরচ, তবু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে
বিশেষ প্রতিনিধি :
পিজিসিবির ভিশন ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবার কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা’। আর মিশন
‘জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের দক্ষ ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশজুড়ে মানসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন নিশ্চিত করা’। অথচ এই দুটোই এখনও নিশ্চিত হয়নি।
যদিও সঞ্চালন লাইন উন্নত করতে প্রতিবছর মোটা অংকের অর্থ খরচ করা হচ্ছে। বছরে দুইহাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন করছে পিজিসিবি। কিন্তু তারপরও পিজিসিবি বলছে, বিনিয়োগ তাদের সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গা। একই সাথে সাতবছরেও বাস্তবায়ন হয়নি সঞ্চালন লাইন উন্নত করার সুপারিশ।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে দুই হাজার ২৮৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করেছে পিজিসিবি। এই বছর নিট লাভ করেছে ৪২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কিন্তু তারপরও ব্যবস্থাপনা উন্নত করায় নজর কম।
২০২০-২১ অর্থ বছরে পিজিসিবি’র চারটি প্রকল্প শেষ হয়েছে। এরমধ্যে সঞ্চালন ও গ্রিডের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এতে খরচ করা হয়েছে ৯৯৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন। ১৩৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা দিয়ে ভেড়ামারা (বাংলাদেশ)-বহরমপুর (ভারত) দ্বিতীয় ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন (বাংলাদেশ অংশ)। এবং ১১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা দিয়ে বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ১৩২ কেভি সঞ্চালন এবং একটি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
৩০শে জুন ২০২১ সরকারের ইক্যুইটি হিসেবে ডিপোজিট ফর শেয়ার খাতে জমার পরিমাণ ছিল টাকা সাত হাজার একশ’ আশি কোটি পঞ্চান্ন লাখ টাকা।
২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টারকে আধুনিক করার প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। আটশ’ কোটি টাকা খরচ করে সে কাজ শেষ করা হয়েছে অনেক আগেই। পরিচালনা খরচ কমানো, ভোল্টেজ ও ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করা স্কাডাকে আধুনিক করা হয়েছিল।
তবুও এখনও মুখেমুখে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে সঞ্চালন ব্যবস্থা। আংশিক ডিজিটাল আর আংশিক মৌখিক অর্থাৎ সনাতন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সনাতন পদ্ধতির ব্যবস্থাপনাই জাতীয় গ্রিডের অন্যতম ঝুঁকি।
সূত্র জানায়, সনাতন ব্যবস্থা জিইয়ে রাখা হয়েছে কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে। সরকারের নির্দেশনা কম খরচের বিদ্যুৎ আগে উৎপাদন করার। কিন্তু তা করা হয় না। এই ব্যবস্থা জিউয়ে রাখলে কম খরচের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখে বেশি খরচেরটা চালু রাখা সহজ হয়।
সঞ্চালন লাইন আধুনিকায়নের কাজ চলছে বলে দাবি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর।
২০১৪ সালে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা তদন্তে কমিটি কারিগরি ত্রুটি, দায়িত্ব পালনে সীমাবদ্ধতা এবং নির্দেশ পালনে অবহেলাকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও কারিগরি ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ২০ দফা সুপারিশ করেছিল। এই সুপারিশের কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। পুরো ব্যবস্থাপনা আধুনিক হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়ন করা জরুরি। সঞ্চালনের সাথে বিতরণ ব্যবস্থাও চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিয়ন্ত্রণ সহজ করতে হবে।
পিজিসিবির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বকশী জানান, স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। ২০১৪ এর সুপারিশের পর সঞ্চালন লাইন পুরোপুরি আধুনিকায়ন হয়নি। আংশিক হয়েছে। বাকীটার কাজ চলছে।
পিজিসিবি বলছে, গ্রিড বিপর্যয় ঠেকাতে অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইন পরিবর্তন করে নতুন লাইন করা হয়েছে। দুর্বল সঞ্চালন লাইনগুলোকে শক্তিশালী করা, উপকেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা এবং সঞ্চালন ও উপকেন্দ্রগুলো আধুনিকায়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে এগুলোর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়ানো হচ্ছে।