বরফের নিচে চাপা অক্ষত প্রাণী

‘জুরাসিক পার্ক’ ছবিতে ডাইনোসরদের কাণ্ডকারখানা দেখে প্রাগৈতিহাসিক যুগের এক জীবন্ত চিত্র পাওয়া যায়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বরফ গলতে থাকায় বেরিয়ে পড়ছে ওই যুগের প্রায় অক্ষত প্রাণী। তাদের কি আবার জাগিয়ে তোলা সম্ভব? বরফ গলে চলায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক জীবাশ্ম বেরিয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীদের কাছে এসব গুপ্তধনের মতো। ১৯৯১ সালে হিমবাহের মধ্যে ও্যৎসির আবিষ্কার ছিল

বিশাল এক চমক। প্রায় ৫,৩০০ বছর আগে এই শিকারি জীবিত ছিল। তার শুকনো জমাট শরীর ছিল এতকাল বরফের নিচে চাপা। ও্যৎসির সঙ্গে পাওয়া যন্ত্রপাতি দেখে প্রাগৈতিহাসিক যুগের এই আবিষ্কারের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট।
বরফের নিচে এমন ঐশ্বর্যের অনুসন্ধান অত্যন্ত জরুরি। বরফ গললে ও তার নিচের জমির জমাট ভাব কেটে গেলে এ কাজে সাফল্যের হার বেড়ে যায়।
তখন গবেষকরা একেবারে অক্ষত জীবজন্তুও পেয়ে যান। যেমন ‘লিউবা’ নামের প্রায় ৪২,০০০ বছর আগের ম্যামথ। সাইবেরিয়ার উত্তরে বিলুপ্ত ওই প্রজাতির একটি শিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে। তার শরীরের জিন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ওই প্রজাতির উত্থান ও পতন সম্পর্কে তথ্য পেতে চান।
রুশ গবেষকরা আরও একধাপ এগিয়ে গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে আবার এই ‘উলি ম্যামথ’ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছেন। ক্লোন করা ম্যামথ? নৈতিকতার মানদণ্ডে বিষয়টি বিতর্কিত, এক্ষেত্রে সাফল্য অনিশ্চিত। বরফে জমাট মাটির তলায় বিলুপ্ত প্রাণীদের ক্ষুদ্র সংস্করণের অভাব নেই। বরফ গলার পর সেগুলোর পুনরুজ্জীবনও অসম্ভব নয়। যেমন একটি ভাইরাস। মার্সেই শহরের গবেষকরা এর নাম রেখেছেন ‘পাইথোভাইরাস’। প্রায় ৩০,০০০ বছর ধরে সেটা বরফে জমাট মাটির নিচে বন্দি ছিল। এখন একটি অ্যামিবার মধ্যে সেটিকে আবার জীবন্ত করে তোলা হয়েছে।
বরফের মধ্যে জমাট এসব নিদর্শন মানবজাতির আদি ইতিহাস সম্পর্কেও অনেক তথ্য সরবরাহ করে। শত্রুর মোকাবেলা করতে মানুষ তখন কী ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করত, সে বিষয়ে আরও জানা যায়। মানুষসহ বিভিন্ন প্রজাতির সৃষ্টির রহস্য, জীবনের রহস্য এখনও বরফের স্তরের নিচে লুকিয়ে রয়েছে। এই চমকপ্রদ বিশ্বে যে আরও কত বিস্ময় লুকিয়ে রয়েছে, কে জানে! ডয়েচে ভেলে।