বাংলাদেশে পরমাণু যুগের সুচনা
পরমাণু যুগে যোগ হওয়ার কাজ শুরু করল বাংলাদেশ। বাংলাদেশেই শুরু হলো পরমাণু চুল্লির কাজ। পরমাণু বিদ্যুৎ ক্লাবের ৩২ তম সদস্য। আর দক্ষিণ এশিয়ার তিন নম্বর দেশ, যারা পরমাণু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে। মধ্য আয়ের সিঁড়িতে ওঠার ধাপ তৈরি হলো। স্বপ্ন পুরণের অপেক্ষা।
পাবনার ঈশরদ্বীতে পরমাণু বিদ্যুতের চুল্লি স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করে বৃহষ্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, আমরা পরমাণু বিশ্বে প্রবেশ করলাম। নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হবে। তিনি বলেন, যে কোনো দুর্যোগে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সেটি খেয়াল রেখেই এর নকশা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্রের দিন আজ পুরণ হতে চলেছে। তিনি বলেন, আইএইএ এর নীতি পুরোপুরি মেনেই আমরা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। ভবিষ্যতে আরও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ইচ্ছার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ এই পারমাণবিক উৎস থেকেই আসবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা লক্ষ্য আছে যে ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। তা করতে হলে আমাদের কী কী করণীয় এবং কোন কোন খাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সেই লিখাচেভ বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলবে। এই কাজের মাধ্যমে আমরা শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রই করছি না। দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাও বাড়লো। আর এই বন্ধুত্ব আমাদের সন্তানসহ পরম্বরায় চলতে থাকবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন-রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সেই লিখাচেভ, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিচালক দো হি হান, তথ্য-প্রযুক্তি সচিব আনোয়ার হোসেন এবং প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এখানে দুটো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রথম কেন্দ্র স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৩ সাল নাগাদ রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে ১২০০ মেগাওয়াট এবং পরের বছর ২০২৪ সালে আরও ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার হবে। ভিভিইআর ১২০০ প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। এখানে এখন দুই হাজার ২০০ জন কাজ করছে। এরমধ্যে রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ আছে ৪৫০ জন। ভবিষ্যতে এখানে কাজ করবে সাড়ে ১২ হাজার জন। এরমধ্যে রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ থাকবে আড়াই হাজার।
১৯৬১ সালে পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সে সময় উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আর করা হয়নি।