বিদেশে বিনিয়োগ: কারা কোথায় করতে পারবে, কতটুকু করা যাবে
বিডিনিউজ:
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করতে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে বিধিমালা প্রকাশ করেছে সরকার; যাতে শুধু রপ্তানিকারকদেরই বিদেশে বিনিয়োগ এবং কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, টানা পাঁচ বছর ধরে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রপ্তানিকারক কোম্পানিই চাইলে শুধু বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন পাবে। তবে সব দেশে তা করা যাবে না।
‘মূলধনি হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা’ শীর্ষক এ নিয়মের শর্ত পূরণ করতে পারলে ওই কোম্পানি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে এমন দেশে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।
বিনিয়োগের পরিমাণও বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিধিমালায়। আগ্রহী রপ্তানিকারকের দেশের বাইরে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ তার কোম্পানির সবশেষ পাঁচ বছরের বার্ষিক গড় রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
এছাড়া সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত নিট সম্পদের ২৫ শতাংশের বেশি অর্থও বিনিয়োগ করা যাবে না বলে শর্ত হিসেবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এতদিন কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং সরকারের আরও কিছু সংস্থা বা বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটি বিনিয়োগের অনুমোদন দিত। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবেই অনুমোদন দেওয়া হচ্ছিল।
ফাইল ছবিফাইল ছবিএ বিধিমালা হওয়ায় বিদেশে বিনিয়োগ ও কোম্পানি গঠনের পথ সুগম হল বলে মনে করছনে সংশ্লিষ্টরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অধিশাখা সম্প্রতি গেজেট আকারে এ বিধিমালা প্রকাশ করে। যেটির প্রেক্ষিতে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকে পাঠিয়েছে।
এ বিধিমালাকে স্বাগত জানিয়ে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের করপোরেট ফাইন্যান্সিং বিভাগের পরিচালক উজমা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিদেশে বিনিয়োগের জন্য সরকার যে বিধিমালা প্রণয়ন করেছে তা অত্যন্ত সুচিন্তিত ও ফলপ্রসূ।
“সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই।“
বিদেশে বিনিয়োগ সহজ হচ্ছে, জানালেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, এতে একটি বাংলাদেশি কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বেঁধে না দিয়ে কোম্পানিগুলোর সামর্থ্যের একটি অংশ বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
“ফলে কোম্পানিগুলো নিজের সক্ষমতা ও প্রয়োজন মতো বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে।“
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ভারতে তাদের বিনিয়োগের শাখা সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় খবর বেরিয়েছে।
এর বাইরে পোশাকখাতের প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরকারের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছে। আরও বেশ কিছু রপ্তানিকারক কোম্পানি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দেন দরবার করছে।
কোন দেশে করা যাবে বিনিয়োগ
>> যেসব দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের চাকরি করার ও অর্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে এবং যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি আছে, বিনিয়োগ করা যাবে শুধু সেসব দেশে।
>> যেসব দেশে থেকে বিনিয়োগের লাভসহ মূলধন, মুনাফা, লভ্যাংশ, সুদ, শেয়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ, বিনিয়োগ বিলুপ্তির ফলে অবশিষ্ট অর্থ এবং অন্যান্য আয় হিসেবে স্বীকৃত কারিগরি প্রজ্ঞান ফি, রয়্যালটি, পরামর্শক ফি, কমিশন বা অন্যান্য প্রাপ্য ফেরত আনা যাবে বিনিয়োগ করতে হবে সেখানে।
>> বিনিয়োগের জন্য নির্বাচিত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিপাক্ষিক পুঁজি বিনিয়োগ, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ চুক্তি থাকতে হবে।
>> জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অফিস অব ফরেন অ্যাসেটসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞা আছে এমন দেশে বিনিয়োগ করা যাবে না।
বিনিয়োগের সীমা কত, শর্ত কী
>> কোটা হিসাবে পর্যাপ্ত স্থিতি থাকা সাপেক্ষে বাংলাদেশের বাইরে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিগত পাঁচ বছরের বার্ষিক গড় রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
>> অথবা সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত নিট সম্পদের ২৫ শতাংশের বেশি অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করা যাবে না।
>> বিদেশে বিনিয়োগের অর্থ সরাসরি সহযোগী কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে হবে। বিদ্যমান কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অর্থ সরাসরি শেয়ার হস্তান্তরকারীর অনুকূলে পাঠাতে হবে।
>> যেই ব্যাংক থেকে বিদেশে মূলধনী বিনিয়োগের অর্থ যাবে, সেই ব্যাংককে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও দলিল বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি সংস্থার পরিদর্শনের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
>> নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ প্রস্তাবের অনুমোদিত প্রাথমিক মূলধন বিদেশে পাঠিয়ে দিতে হবে আবার কোনো কারণে বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে অনতিবিলম্বে সেই অর্থ ফেরত আনতে হবে।
>> বিনিয়োগপ্রসূত আয়, লভ্যাংশ বা শেয়ার বিক্রিত অর্থ এবং সহযোগী কোম্পানির অবসায়নজনিত প্রাপ্য অর্থ ইত্যাদি বাছাই কমিটির সুপারিশ ব্যতিরেকে পুনঃবিনিয়োগ করা যাবে না।
>> অর্থ পাচার, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীর স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতি অবমাননাকর আচরণ ও মন্তব্য এবং বর্ণবাদী আচরণ ও কার্যকলাপের বিষয়ে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করতে হবে।
>> বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত সহযোগী কোম্পানি থেকে প্রাপ্য মুনাফা বা লভ্যাংশ সুদ, শেয়ার বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ বিনিয়োগ বিলুপ্তির ফলে অবশিষ্ট অর্থ বেতন, রয়্যালটি, কারিগরি প্রজ্ঞান ফি, পরামর্শ ফি, কমিশন অর্জিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে দেশে ফেরত আনতে হবে।
>> ইক্যুইটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ মালিকানা বা পরিচালনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এরূপ সংখ্যক শেয়ার ধারণ করতে হবে।
>> যেই দেশে কোম্পানি খোলা হচ্ছে সেখানে দেশীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি সেই দেশের ঋণও নেওয়া যাবে।
(ক) বিদেশে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমোদনের প্রমাণগুলো ওই দেশের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সত্যায়নসহ ডিলার ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
>> বিদেশি সহযোগী কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি করলে ৩০ দিনের মধ্যে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।
>> এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরের আগে নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের মাধ্যমে শেয়ারের প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
>> যেকোনো পুঁজিবাজারে কোনো সহযোগী কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন লাগবে।