বিদ্যুতায়িত হয়ে দুই পরিবারে ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু

বিদ্যুতায়িত হয়ে দুটি পরিবারের ছয়জন মারা গেছেন। এক পরিবারে চারজন, অন্যতে দুই। একজন অন্যকে বাঁচাতে গিয়েই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছে বেশি।
বরিশালের বাউফলে পুকুরে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে থাকায় একই পরিবারের চারজন মারা যান। এর মধ্যে বাবাসহ তার দুই মেয়ে ও এক শ্যালকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে মৌলভীবাজারে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে মেয়ে এবং বাবার মৃত্যু হয়েছে।
ঈদের ছুটিতে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে একই পরিবারের চারজন মারা গেছেন। এ মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে এসে স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শুক্রবার সকালে উপজেলার কালিশুরি ইউনিয়নের ধলাপারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বাউফলের কালিশুরি ইউনিয়নের ধলাপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর বড় জামাই ইব্রাহিম ঈদের ছুটিতে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাড়ির দক্ষিণ পাশেই একটি পুকুর। পুকুরের পাড় দিয়ে গেছে ৩২ হাজার মেগাওয়াটের বাউফল পল্লী বিদ্যুতের তার। আবদুল হাই ওই পুকুরে জাল নিয়ে মাছ ধরতে যান। পুকুরে পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ছিল। পুকুরে জাল ফেলতেই বিদ্যুতায়িত হন তিনি। এ সময় ভগ্নিপতি ইব্রাহিম তাকে উদ্ধার করতে যান। বাবা ইব্রাহিম ও মামা আবদুল হাইকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান দিনা বেগম ও মৌ। পরে এলাকাবাসী বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে খবর দিলে লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর এলাকাবাসী ওই পুকুর থেকে আবদুল হাই, ইব্রাহিম, দীনা বেগম ও মৌ বেগমের লাশ তুলে আনে।
এ ঘটনায় বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন ৫০ হাজার টাকা সাহায্য দিয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের কোনো গাফিলতি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক মোবাইল ফোনে ছুটিতে আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, প্রচণ্ড ঝড়ে মেইন লাইনের তার ছিঁড়ে পড়ার ঘটনা বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করলে এ ঘটনাটি হয়তো ঘটত না। বাউফল থানার ওসি মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো পটুয়াখলী জেনারেল হাসাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মৌলভীবাজার, কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও গ্রামে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিদ্যুৎস্পর্শে সিলেট লিডিং ইউনিভারসির্টির ছাত্রী রিপা বেগম ও তার বাবা শফিক মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। এ মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
বৃহস্পতিবার সকালে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে গেলে ফ্রিজটি রিপার ওপর পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় বাবা শফিক মিয়া ফ্রিজটি মেয়ের ওপর থেকে সরাতে গেলে তিনিও বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান। পরিবারের অন্য সদস্যরা বিদ্যুৎ লাইনের মেইন সুইচ বন্ধ করে বাবা ও মেয়েকে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যাওয়া রিপা বেগম বিবাহিত এবং সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। স্বামী ইংল্যান্ড প্রবাসী। শ্বশুড়বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়।