বিদ্যুতের দাম: বিইআরসি দেরি করলে অন্য চিন্তা, বললেন প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। পদ্মা নদীর মাওয়া ফেরি ঘাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: এনার্জি বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ :

গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য এখন সরকার চাইলে সমন্বয়ের ক্ষমতা করতে পারে, তারপরও আপাতত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ভার বিইআরসির উপরই ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানালেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তবে কমিশন দেরি করলে সরকার এবিষয়ে চিন্তা করবে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি আইন সংশোধন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষমতা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পাশাপাশি সরকারের কাছেও নেওয়া হয়।

এদিকে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বৃদ্ধিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদন পেয়ে আগামী ৮ জানুয়ারি গণশুনানির দিন ঠিক করেছে বিইআরসি।

মঙ্গলবার ঢাকায় জাইকা আয়োজিত সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা নিয়ে নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে তৃতীয় বৈঠক শেষে এবিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের জন্য আমরা বিইআরসির উপর ছেড়ে দিয়েছি। তারা তাদের প্রসেসের মধ্য দিয়ে যাচাই-বাছাই করুক। কিন্তু সরকার বিশেষ প্রয়োজনে যখন দ্রুততার সাথে দাম বাড়াতে হবে, আকস্মিক বিষয় যখন আসবে তখন দেখবে।

“আমি মনে করি বিতরণ কোম্পানিগুলো যেহেতু একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, সেটা শেষ হোক। সেটা যদি দ্রুত শেষ করতে পারে খুবই ভালো। যদি দ্রুত শেষ করতে না পারে তখন আমরা অন্য চিন্তা করব।”

ভবিষ্যতে নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এবারের মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশীয় কয়লাখনির কয়লা উত্তোলনের পক্ষেও তিনি।

নসরুল বলেন, “জ্বালানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তিনটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত বিদ্যুৎ জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। এই কৌশলেই আগামীর মাস্টারপ্লান আসবে।

“নিজস্ব কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে আমরা একটা মতামত নিয়েছি সব পক্ষের কাছ থেকে। এখন এটা নিয়ে খুব দ্রুতই আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব, পরিবেশ এবং সবকিছু মাথায় নিয়ে কিভাবে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহার করা যায়।”

তিনি বলেন, “মাইনিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি আসছে, যেটা গত পাঁচ বছরে ছিল না। কয়লা থেকে অ্যামোনিয়া করে, সেখান থেকে মিথেন কীভাবে ব্যবহার করতে পারি, এগুলো নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো মাস্টারপ্লানে যুক্ত করা হয়েছে। অনেক কিছু আছে মাস্টারপ্লানে যুক্ত করা হয়নি, আলোচনা চলছে, সেগুলো যুক্ত করব।”

বিদ্যুতে ও জ্বালানি খাতে অব্যাহত বর্ধিত চাহিদা পূরণে ভবিষ্যতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা খোলা বাজারে চলে যাবো। বেসরকারি খাত কীভাবে জ্বালানি আমদানি করতে পারে। মূলত সাবসিডি থেকে কত দ্রুত বের হতে পারি এবিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।”

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস নিশ্চিত করতে পারলে শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

নসরুল বলেন, “বিশ্বের অনেক শিল্প সরে বাংলাদেশে আসছে, তাদের দরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস। তাদের কাছে দাম বড় বিষয় না। অন্যদিকে আবাসিকে দাম বড় ইস্যু। আমরা দুটির মধ্যে সমন্বয় রাখার চেষ্টা করছি। শিল্পের গ্রোথের ফলে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই গ্রোথ আমরা থামাতে চাই না। সেজন্য যেভাবেই হোক তাদের গ্যাস দেওয়ার চেষ্টা আমরা করছি।”

অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি সৌর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী দুই বছরে দুই হাজার মেগাওয়াট সোলার এনার্জি নিয়ে আসতে পারি কি না, আমরা চেষ্টা করছি। সামনের বছর এক হাজার মেগাওয়াটের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে। সেখানে কিভাবে মিটিগেট করা যায়, আমরা সেই চিন্তাও করছি।”

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে, এখন দেশে কমানো হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এখন এলপিজি যেভাবে সমন্বয় করা হয়, তেলের বিষয়েও এভাবে প্রতিমাসে সমন্বয় করা যায় কি না, আমরা চেষ্টা করছি। সেটার জন্য পলিসি তৈরি হয়ে যাচ্ছে।

“আমরা চুক্তি অনুযায়ী, তিন মাস পর পর তেল আনি। আমরা খোলা বাজারে যদি যেতে পারি সেটা ভালো হবে। কারও উপর দোষারোপ করা যাবেনা যে দাম বেশি বা কম। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী, জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে গ্যাস ও বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনার বিষয়ে একাধিক ধারণাপত্র উত্থাপন করেন জাইকার বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কোম্পানি ও বিভাগের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।