বিদ্যুতে ১৫ শতাংশ ভ্যাটে ভোক্তাদের আপত্তি

ভোক্তারা বিদ্যুৎ বিলের ওপর ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দেন। নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এতে ভোক্তাদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। এ ছাড়া ভ্যাট হিসাবের পদ্ধতিও অস্পষ্ট।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এসব তথ্য জানিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেছেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তে ভোক্তারা আতঙ্কে ভুগছেন। দাম বাড়বে না, এমন কোনো আশ্বাস ভোক্তারা মানছেন না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেলের মতো পণ্যের দাম যত কম হয়, জনকল্যাণ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ততই বাড়ে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।

মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন বিষয়ে এক কর্মশালায় শামসুল আলম এসব কথা বলেন। এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প ক্যাব সদস্যদের জন্য গতকাল এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।

কর্মশালার শুরুতে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক রেজাউল হাসান বলেন, ভোক্তাদের মধ্যে নানা আলোচনা হচ্ছে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, বিষয়টি ঠিক নয়। বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যে ভ্যাট নেই। এরপরও কোনো পণ্যের ভ্যাট থাকার কারণে সমস্যা হলে সংসদে আলোচনা হবে। যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে, তা নিরসন হবে সংসদে।

ক্যাবের উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রল, এলপিজি, কেরোসিন, জেট-ফুয়েলের মতো আমদানি করা জ্বালানির ক্ষেত্রে কীভাবে মূল্যহার সমন্বয় করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় হবে, হিসাব স্পষ্ট হওয়া দরকার। পণ্য বা সেবার মূল্য যেখানে দর-কষাকষির ভিত্তিতে নির্ধারণ হয়, সেখানে নতুন ভ্যাট আইন কীভাবে বাস্তবায়ন হবে।

শামসুল আলম বলেন, ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ঠিক করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। নতুন ভ্যাট আইন কি তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? সারা বিশ্বে তেলের দাম বাড়লে দেশেও বাড়ানো হয়। কমলে জনগণ সুফলটা পায় না।

এনবিআরের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকার যে দামে গ্যাস কেনে, তার চেয়ে কমে বিক্রি করে। এ খাত থেকে কর প্রত্যাহার করলে লোকসান আরও বাড়বে। বাংলাদেশে ভোক্তারা সবচেয়ে কম দামে গ্যাস পান। শিল্পকারখানায় গ্যাসের অপচয় কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিদ্যুতের দামে ভোক্তাপর্যায়ে ভ্যাট যুক্ত থাকছে। বিদ্যুতের ওপর ভ্যাট আরোপ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে সতর্ক করা হয়েছে। এ কারণে নতুন আইনের ফলে দাম বাড়বে না।

ক্যাব চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা এমন আইন চাই, যে আইন বাস্তবায়ন হলে জনগণ স্বস্তি পায়, দ্রব্যমূল্য না বাড়ে। ভ্যাট আইন নিয়ে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে জনসাধারণের জীবনব্যয় বাড়বে। প্রত্যক্ষ কর সব সময় পরোক্ষ করের চেয়ে ভালো। দেশে ২৫-৩০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ কর দিতে পারে। রাজস্ব আদায়ে কেন সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে?’

গোলাম রহমান বলেন, ‘বলা হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কোনো ভ্যাট নেই, আবার অব্যাহতির তালিকায় রয়েছে শকুনের মাংস। বাসস্থান তো মৌলিক অধিকার, তাহলে রডের দাম কেন বাড়ল? ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় এমন পণ্যের নাম থাকায় সরকারের এ উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। টুথপেস্ট, সাবানের ওপর কেন ভ্যাট দিতে হবে। আমরা সমৃদ্ধি চাই না, স্বস্তি চাই। কোনো সমৃদ্ধির জন্য স্বস্তি নষ্ট হলে সে সমৃদ্ধির দরকার নেই।’ ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার এখনো আসেনি উল্লেখ করে ক্যাব চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজা আসছে রাজা আসছে শুনি, আর আসে না। কবে আসবে তাও জানি না।’

গোলাম রহমান বলেন, সুদের হার এখন সর্বনিম্ন, মূল্যস্ফীতির চেয়েও কম। এরপর আবার হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে লুটপাট হচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। আবার জনগণের ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়াটাও কোনোভাবেই সঠিক পথ নয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে জনসাধারণকে অবহিত করতে হবে। বাজেটে অনেক সুবিধা হয়েছে, জনগণকে এসব বোঝাতে হবে। বাজেটে দেশি শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। রপ্তানিকারকদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান যেন বাড়ে, এমন উদ্যোগ রয়েছে