দ্রুত সরবরাহ আইন: দুর্নীতি ও অস্বচ্ছ হবে

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সহ সবকিছুরই দাম বাড়বে। বাড়বে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। জ্বালানি নিরাপত্তার বদলে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা বাড়বে জ্বালানি খাতে।

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের মেয়াদ আরও চার বছর বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। এই বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত দেন।

তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই আইন করা হয়নি। জ্বালানিখাতে আরও অপকর্ম, দুর্নীতি করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য এ ধরণের আইনের প্রয়োজন নেই। সরবরাহ বাড়ালেই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। \

উচ্চমুল্যের জ্বালানি সরবরাহ করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তৈরি করে জ্বালানিখাতে আরও অস্বচ্চ তৈরি করছে। আইনের মেয়াদ বাড়ানোর অর্থ হচ্ছে এই খাতের দুর্নীতির সময় বাড়লো। চার বছর সরকার এইখাতে দুর্নীতি করার লাইসেন্স নিলো।

বুয়েটের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, সরকারের প্রতিশ্র“তি অনুযায়ি ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তিন বছর এবং ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পাঁচবছর মেয়াদি হওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে বড় ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আনার কথা।

কিন্তু সরকার সাড়ে ছয় বছরের একটি সাশ্রয়ী কেন্দ্র উৎপাদনে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। কয়লার মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা বলছে সরকার। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, এসব আইনের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তার নামে বেশি দামের জ্বালানি আনা হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। পাশাপাশি যেসব কোম্পানিকে কাজ দেয়া হচ্ছে তাদের যোগ্যতা বিবেচনা করা হচ্ছে না। ফলে প্রকল্পগুলো হয় ধীরে চলছে নয়তো থমকে আছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, এই আইনটি একটি বিতর্কিত আইন। এই আইনের মাধ্যমে সরকার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বললেও বাস্তবে তো জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে তাও ব্যয়বহুল। তিনি বলেন, শুধু জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করলেই হবে না এর মূল্যও দেখতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এই জ্বালানির মাধ্যমে উপকৃত হবে কিনা তাও বিবেচনা করতে হবে সরকারকে। নয়তো শুধুমাত্র দায়মুক্তির জন্য এই আইন করলে সরকার দায়মুক্ত হতে পারবে না।

২০১০ সালের ১২ অক্টোবর আইনটি দু বছরের জন্য করা হয়। পরে আরও দুবছর সময় বাড়ানো হয়। আগামী ১১ অক্টোবর এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
এই আইনে ধারা-উপধারায় পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্য কোনও দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অথবা কুইক রেন্টালের বিষয়ে কোনও কার্যক্রম, গৃহীত কোনও ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনও আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনও আদালতের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। একই সঙ্গে এসব কাজের জন্য কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনও প্রকার আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।

এই আইনের আওতায় ১৫ কুইক রেন্টাল ও পাঁচটি রেন্টাল কোম্পানির ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তি করে পিডিবি। এরমধ্যে ১৩ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর করে বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো ১৫টি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প¬্যান্ট) স্থাপনের চুক্তি করে পিডিবি।

জ্বালানিখাতে এই আইনের আওতায় রাশিয়ার রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের ১০টি উন্নয়ন কূপ খননের চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ৮টি চুক্তি করে। এরমধ্যে ২টি গ্যাস কম্প্রেসর এবং আশুগঞ্জ থেকে এলেঙ্গা, বাখরাবাদ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত তিনটি গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ রয়েছে।

সর্বশেষ এই আইনের আওতায় চলতি বছর কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক্সট্রা অয়েল এন্ড এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে অনুসাক্ষর করেছে পেট্রোবাংলা।