বিদ্যুৎ জ্বালানিতে সংস্কার চায় সিপিডি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ বাতিল করাসহ এ খাতে দ্রুত বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

সিপিডি যেসব বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চায়, সেগুলো হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা তৈরি, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন সংশোধন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা তৈরি।

গতকাল রবিবার রাজধানীর ধানম-িতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার : সিপিডির প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বিশেষ বিধান আইনটি দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিত। যার মাধ্যমে গত ১৪ বছরে দরপত্র ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ আইনের অধীন নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির প্রস্তাবনা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারকে প্রথমে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হবে। সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন ২০১০ বাতিল করা জরুরি। যেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির জন্য অযাচিতভাবে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করতে হবে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতির চেয়েও বেশি ক্ষতি করেছে বিভিন্ন নীতি। দেড় থেকে দুই গুণ বেশি চাহিদা হিসাব করে প্রক্ষেপণ তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে, তা দিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করা যাবে। এমন নীতি তৈরিই করা হয়েছে একটা গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে।

নীতি ও আইন খাতে ১৭টি সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে দেওয়া দরকার। বিদ্যুৎ খাতে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে’ অনুযায়ী চুক্তি সংশোধন করলে ভর্তুকির চাপ কমবে। গ্রাহককে বাড়তি দাম দিতে হবে না।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিদ্যমান চুক্তি সংশোধন করে ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিলের প্রস্তাব দিয়ে সিপিডি বলেছে, বিদ্যুৎ নেই, বিল নেই শর্তে এটি করা যেতে পারে।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান সংস্কার করা দরকার। এর মধ্যে আছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে নানা অনিয়ম হলেও বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। অন্তর্র্বর্তী সরকারকে এগুলো বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।

নতুন করে জ্বালানি নীতি তৈরির তাগিদ দিয়ে সিপিডির সুপারিশে বলা হয়েছে, দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে হবে। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো দরকার। গত পাঁচ বছরে বিপিসি ও পিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি।