বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করব বলে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে এরই মধ্যে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালের ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভবিষ্যতে বর্ধিত বিদ্যুৎ চাহিদার বিষয় বিবেচনায় রেখে আমরা উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, ডুয়েল-ফুয়েল, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, পটুয়াখালী জেলার পায়রা, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকায় নির্মিত পাওয়ার হাবগুলোতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রামপালে কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল প্রজেক্ট (প্রথম ইউনিট) ও পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ি (২x৬০০ মেগাওয়াট) আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে জীবাশ্ম এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া সরকার মোট ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

আঞ্চলিক বিদ্যুতের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পাশাপাশি আমরা আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সংগ্রহ করছি। ২০৪১ সালের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে আন্তঃদেশীয় গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়াও ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিত ২ ইউনিটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। নেপালের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে নির্মিয়মান জল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত পর্যায়ে সইয়ের অপেক্ষায় আছে।

তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন মুস্তফা কামাল।

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।