ধীরে চলো নীতিতে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আশায় আবেদনের পাহাড় জমেছে। বিতরণ সংস্থাগুলো আবেদন নিয়ে সামলে উঠতে পারছে না। কিছু সংযোগ দিলেও তার দ্বিগুণ নতুন আবেদন জমা হচ্ছে। ফলে নতুন আবেদন আর পুরোনো জমে থাকা, দুটো মিলে পাহাড় জমেছে যেন। জমে থাকা নতুন আবেদনের সংখ্যা গিয়ে দাড়িয়েছে প্রায় তের লাখে। এজন্য ধীরে চলো নীতিতে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জুলাই পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৪২৫টি বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নেয়ার আবেদন জমা আছে। এই আবেদনকারীদের সকলকে যদি সংযোগ দেয়া হয় তাতে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। এই চাহিদা মেটানো যাবেনা বলেই আবার ধীরে ধীরে সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই এখন চাহিদার একটি বড় অংশ ঘাটিত থাকছে। সাথে নতুন আবেদনকারীদের দ্র“ত সংযোগ দিলে চাহিদা বাড়বে। সাথে ঘাটতি আরও বাড়বে। চাহিদার সাথে উৎপাদন বাড়বে না। এজন্যই ধীরে চলো নীতিতে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
পাঁচটি কোম্পানির কাছে জমা থাকা আবেদনকারীকে সংযোগ দিলে প্রয়োজন হবে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬৯ কিলোওয়াট বা এক হাজার ৫৩৯ দশমিক ৩৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, শুধু জুলাই মাসে পাঁচটি বিতরণ কোম্পানির কাছে এক লাখ ৯১ হাজার ১৪৪টি নতুন সংযোগের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এই মাসে নতুন সংযোগ দেয়া হয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ৪৭০টি। আর তার আগের মাস পর্যন্ত আবেদন জমা ছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫১টি।
জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর কাছে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য মোট ২৫ হাজার ৯০৯টি আবেদন জমা আছে। এই আবেদনকারীদের সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ লাগবে এক লাখ এক হাজার ৫০০ কিলোওয়াট। গত পাঁচ বছরে পিডিবি নতুন সংযোগ দিয়েছে ৭৫ হাজার ৯২৭টি। শুধু গত মাসে পিডিবিতে আবেদন জমা পড়েছে ১৬ হাজার ৪২৭টি। এই মাসে নতুন সংযোগ দিয়েছে ২০ হাজার ৩০০টি।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কাছে জমা আছে দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৩টি আবেদন। এই আবেদকারীদের বিদ্যুতের প্রয়োজন ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪৪০ কিলোওয়াট। ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (ডেসকো) এর কাছে আবেদন আছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৬৬২টি। এই আবেদনকারীদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন ১০ লাখ ৯১ হাজার ৯৪৯ কিলোওয়াট।
ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এর কাছে ছয় হাজার ৭৭৭টি আবেদন জমা আছে। যার বিপরীতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন ১০ হাজার ৩৭২ কিলোওয়াট। পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এর কাছে আবেদন আছে ২০ হাজার ৪৪৯টি। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন ১০ হাজার ৩৪২ কিলোওয়াট।
বিতরণ সংস্থা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া বল্পব্দ নেই। কাজগে কলমে এই প্রত্রিক্রয়া চালু আছে। কিন্তু চাহিদা পহৃরণ করা যাবে না বলে ধীরে চলো নীতিতে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। সংযোগ দেয়ার কথা বলা হলেও বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে না। এজন্য দ্র“ত সংযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা।
কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ-সংকট, বিতরণ লাইনের ত্রুটিসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বর্তমানে গড়ে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় উৎপাদন হচ্ছে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এখন দেশের চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার থেকে আট হাজার মেগাওয়াট। নতুন প্রত্যাশীদের সংযোগ দেয়া হলে চাহিদা বাড়বে আরও দেড় হাজার। তখন ঘাটতির পরিমান অনেক বেড়ে যাবে। কর্মকর্তারা জানান, একসঙ্গে এত বেশি বিদ্যুতের বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব নয়।