বিদ্যুৎ সংস্থা ও কোম্পানিতে বেতন বৈষম্য

বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিতে বেতন বৈষম্য বাড়ছেই। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সংস্থার বেতন বৈষম্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একই পদে থেকে কোম্পানিতে যা বেতন পাচ্ছেন সংস্থায় তার প্রায় অর্ধেক। সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন করার পর এই বৈষম্য আরো বেড়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) সংস্থা হওয়ায় এই দুই প্রতিষ্ঠানে সরকারি স্কেলে বেতন হয়। কিন্তু সরকারি কোম্পানিগুলোতে নিজস্ব কাঠামোতে বেতন হয়। যা সরকারি সংস্থার চেয়ে অনেক বেশি। সরকারি কোম্পানি গঠনের পর থেকেই এই বৈষম্য চলে আসছে। সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর বেতন ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। এতে বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

পিডিবি, আরইবি ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বর্তমান বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে কোম্পানিগুলোতে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারন করা হলেও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সে সুবিধা এখনো পাননি। তাদের বেতন না বাড়িয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে অন্য সব কোম্পানি বাড়তি বেতন বোনাস পেলেও পিজিসিবি তা পাচ্ছে না। পিজিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি আদেশ অমান্য করে বেতন দেয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে পিজিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের।

গত ১৬ জুন বিদ্যুৎ বিভাগ কোম্পানিগুলোর নতুন বেতন কাঠামোর অনুমোদন দেয়। উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালন সব কোম্পানির জন্য নতুন বেতন নির্ধারন করা হয়। এ বেতন চলতি বছরের ১ জানুয়ারি  থেকে কার্যকর করা হয়েছে। নতুন কাঠামোতে কোম্পানিগুলোর বেতন সর্বোচ্চ এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং সর্বনিন্ম বেতন ১৫ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি স্কেলে বেতন সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনি¤œ বেতন আট  হাজার ২০০ টাকা। প্রথম গ্রেডে কোম্পানিগুলোর তুলনায় সংস্থার বেতনের পার্থক্য প্রায় এক লাখ টাকা। সর্বনি¤œ পর্যায়েও এই বৈষম্য দ্বিগুন।

সরকারি সংস্থা ও কোম্পানির বেতন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় সব গ্রেডের বেতনই দ্বিগুণ। কোম্পানিতে গ্রেড-২ এ বেতন এক লাখ ৪০ হাজার টাকা, এই গ্রেডে সরকারি বেতন ৬৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ পার্থক্য ৭৪ হাজার টাকা। গ্রেড-৩ এ এক লাখ ১৪ হাজার টাকা, সরকারিখাতে এই গ্রেডে বেতন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা, পার্থক্য ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। কোম্পানিতে  গ্রেড-৪ এর বেতন ৯৮ হাজার টাকা, সরকারি বেতন ৫০ হাজার টাকা, পার্থক্য ৪৮ হাজার টাকা। গ্রেড-৫ এ ৭৯ হাজার টাকা, সরকারি বেতন ৪৩ হাজার টাকা, গ্রেড-৬ এ এখন বেতন ৫১ হাজার টাকা, যা সরকারি সংস্থায় ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা।  গ্রেড-৭ এ ৪৫ হাজার টাকা, সরকারিতে ২৯ হাজার টাকা,  গ্রেড-৮ এ ৩৭ হাজার টাকা, সরকারিতে  ২৩ হাজার টাকা। তবে গ্রেড-৯ এর বেতন সরকারি সংস্থার তুলনায় কম। কোম্পানিতে গ্রেড-৯ এ বেতন ১৮ হাজার  টাকা, বিপরীতে সরকারি সংস্থায় এই গ্রেডের বেতন ২২ হাজার টাকা। এরপর গ্রেড-১০ এর বেতন ২৮ হাজার টাকা, সরকারিতে বেতন ১৬ হাজার টাকা, গ্রেড-১১ এতে ২৫ হাজার টাকা, সরকারিতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। গ্রেড-১২ এ ২৪ হাজার টাকা, সরকারি সংস্থায় এই গ্রেডের বেতন ১১ হাজার ৩০০ টাকা। গ্রেড-১৪ এ ২৩ হাজার টাকা, সরকারিতে এই বেতন দশ হাজার ২০০, গ্রেড-১৫ এ ২০ হাজার টাকা, সরকারিতে নয় হাজার ৭০০ টাকা, গ্রেড-১৬ এ ১৮ হাজার টাকা, সরকারিতে নয় হাজার ৩০০, কোম্পানিতে গ্রেড-১৭ এ ১৭ হাজার টাকা, সরকারিতে নয় হাজার টাকা,  গ্রেড-১৮ এ ১৫ হাজার টাকা, সরকারি সংস্থায় আট হাজার ৮০০ টাকা, গ্রেড-১৯ এ ১৪ হাজার ৫০০ টাকার বিপরীতে সরকারি সংস্থায় আট হাজার ৫০০ এবং গ্রেড-২০ এ ১৪ হাজার টাকা করা হয়েছে, এর বিপরীতে সরকারি সংস্থায় আট হাজার ২৫০ টাকা।

বিতরণ কোম্পানির ক্ষেত্রেও একই অবস্থায় এইখাতের জন্য ১৬টি গ্রেডে নতুন করে সরকারি বেতন নির্ধারণ করেছে। বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের  বেতন করা হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যা আগে ছিল এক লাখ টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে এক লাখ ৪০ হাজার, এক লাখ ৪০ হাজার, ৯৮ হাজার, ৭৯ হাজার, ৬১ হাজার, ৫১ হাজার, ৩৯ হাজার, ৩২ হাজার, ২৭ হাজার, ২৫ হাজার, ২৪ হাজার, ২৩ হাজার, ১৮ হাজার, ১৭ হাজার এবং ১৬তম গ্রেডে বেতন নয় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। যার সবই সরকারি সংস্থার তুলনায় বেশি।

আরইবি ও পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগ জরুরি সেবার আওতায় হওয়ায় বিশেষ বিবেচনায় তাদের বেতন সরকারি স্কেলের চেয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ভাতা বা অন্য সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।

সরকারি বেতন আগে তুলনামুলক কম ছিল। এজন্য কাজের গতি আনতে কোম্পানি করে তাদের বেতন বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন সরকারি বেতন আগের তুলনায় বেশি। সেই অবস্থান থেকে সরকারি সংস্থার চেয়ে কোম্পানির বেতন দ্বিগুণই হতে হবে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।