বিশেষ আইনে সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান
এবার বিনাপ্রতিযোগিতায় সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ দেয়া হচ্ছে বিদেশী কোম্পানিকে। ২০১০ সালের বিশেষ আইনে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহষ্পতিবার এই কাজের অনুমতি দিয়েছেন। মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর এবং ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে বিশেষ আইনে কাজ দেয়া হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বৃহষ্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেয়েছি। দ্রুত সময়ে সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরু করার জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশের স্বার্থ বিবেচনা করেই চূড়ান্তভাবে কোম্পানি নির্বাচন করা হবে। বিশেষ আইনে এই কাজ না করলে অনুসন্ধান থেমে আছে বলে তিনি জানান।
আগামী ১৮ই জানুয়ারি এবিষয়ে বৈঠক করা হবে। বৈঠকে পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সমুদ্রের পাঁচটি ব্লকের জন্য বিশেষ আইনে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করা হবে। তবে নতুন করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। সেই আহবানে যারা আসবে তাদের সাথে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে কাজ দেয়া হবে।
এদিকে বিশেষ আইনে বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দিতে গ্যাসের দামও বাড়ানো হচ্ছে। পিএসসি ২০১২ সংশোধন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে।
সূত্র জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের দামের সাথে সমন্বয় করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে।
বারবার দরপত্র আহবান করেও কোন সাড়া না পেয়ে বিশেষ আইনের আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
বিশেষ আইনের আওতায় যে পাঁচটি ব্লকে অনুসন্ধান করার অনুমোতি দেয়া হয়েছে সেখানে আগেই বিদেশীদের কাজ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত তা না করে চলে যায়।
এদিকে এই পাঁচটির মধ্যে তিনটিতে খনিজ অনুসন্ধানের জন্য গতমাসে (ডিসেম্বর ২০১৫) নতুন করে আর্ন্তজাতিক দরপ্রস্তাব আহবান করেছিল পেট্রোবাংলা। ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকের জন্য এই দরপত্র আহবান করা হয়। এই তিনটি ব্লকের ৮১ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে ২০ থেকে দুই হাজার ৫০০ মিটার গভীরে দ্বিমাত্রিক জরিপ করতে এই দরপ্রস্তাব আহবান করা হয়।
এর আগে ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লক কনোকো ফিলিপস্ ও স্টেটঅয়েলকে ইজারা দেয়া হয়েছিল। সেখানে তারা যৌথভাবে জরিপ করেছিল। জরিপে বলা হয়েছিল, এই ব্লকে গ্যাস থাকার কাঠামো বা আধার আছে। গ্যাস বা তেল আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন ছিল। সেই বিনিয়োগ করার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি জানায় তারা। কিন্তু উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির খসড়া পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকায় সরকার গ্যাসের দাম বাড়ায়নি। আর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি বলে কনোকো স্টেটওয়েল বাংলাদেশ থেকে কাজ শেষ না করেই চলে গিয়েছিল। তারা বলেছিল, প্রতি হাজার ঘন ফুট গ্যাসের দাম ছয় ডলার ধরা হয়েছে, যা যথেষ্ট নয়। নয় ডলার করতে হবে অথবা সাগরের তেল-গ্যাস রপ্তানির সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই দাবি মানা হয়নি।
পেট্রোবাংলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের দাম না বাড়লে কেউ বিনিয়োগ করতে আসছে না। এজন্য ২০১২ পিএসসি সংশোধন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। তবে নতুন দাম এখনও ঠিক হয়নি। প্রতিবেশি মিয়ানমারে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম আট ডলার। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য দাম তেমনই হতে হবে।
গভীর সমুদ্রের অন্য দুটি ব্লক ১০ ও ১১ নম্বর দেয়া হয়েছিল কনোকোফিলিপসকে। তারাও নিয়েও ছেড়ে দিয়েছে। কোন কাজ করেনি। এরআগে একবার পিএসসি সংশোধন করে কনোকোর জন্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছিল। তবু তারা চুক্তি করেনি। সংশোধিত পিএসসিতে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উৎপাদনের পর, বছরে দুই শতাংশ হারে দাম সমন্বয়ের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। একই সাথে বাড়ানো হয়েছিল গ্যাসের দাম। তাদেরকে নিজের অংশের গ্যাসের অর্ধেক পেট্রোবাংলার অনুমোতি ছাড়াই দেশের মধ্যে তৃতীয় কোন পক্ষকে বিক্রির সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া কর্পোরেট কর থেকে অব্যাহতি, বছরে সর্বোচ্চ ৭০ ভাগ খরচ তুলে নেয়া এবং পাইপলাইন ব্যবহারের উপর দেয়া ট্যারিফ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তারপরও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুবিধা চেয়েছিল কনোকো। সে সুবিধা দেয়া হয়নি বলে তারা চলে যায়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন ২০১০ অনুযায়ি দরপত্র ছাড়া সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যে কোন কাজ যে কাউকে দিতে পারে। এজন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাকে কোন দোষারূপ করা যাবে না। তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে না। এই আইনে কোন ভুল হলেও জবাবদীহির সুযোগ নেই।
এবিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ম তামিম মনে করেন বিশেষ আইনে বড় প্রকল্পের কাজ না দেয়া ভাল। তিনি এনার্জি বাংলাকে বলেন, সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান করতে ৫/৭ বছর সময় লাগবে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়ায় আরও ৫/৬ মাস সময় বেশি লাগলে কোন সমস্যা নেই। তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী বা বড় প্রকল্প করার জন্য এই আইন করা হয়নি। সাধারণ সব কাজ এই আইনে করলে ভাল মন্দ পছন্দ করার সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন, তবে যদি আলোচনায় বিশেষ কোন শর্ত না দেয়া হয়, বিশেষ কোন সুবিধা না দেয়া হয় তবে এই আইনে কাজ দিলেও কোন সমস্যা নেই। আইনের আওতায় ফেলে বিশেষ সুবিধা দিলেই সমস্যা। যদি নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় তবে আগেই কনোকো ফিলিপসকে বেশি দামে দিলে সময় কিছুটা কম লাগতো। তা করা হয়নি।