ভূমিকম্পে আপনা আপনি বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে
স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে ন্যাশনাল লোডডেসপাস সেন্টারকে (এনএলডিসি)। নির্দিষ্ট মাত্রার ভূমিকম্প হলে সরবরাহ ব্যবস্থা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে এমন ব্যবস্থা করা হবে যাতে এতে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। জাপানসহ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশে এই ব্যবস্থা রয়েছে।
দেশে ভূমিকম্প হলে সারাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থলে কী হবে তা এত দিনেও ঠিক ছিল না। ফলে বড় কোন ভূমিকম্প হলে কী ঘটবে তাও নির্ধারিত নয়। ভূমিকম্প হলে এমনিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়। তবে প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় এনএলডিসির নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মী যে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই। সঙ্গত কারণে স্বয়ংক্রিয় প্রথার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে কতমাত্রার ভূমিকম্প হলে ন্যাশনাল লোডডেসপাস সেন্টার বন্ধ হয়ে যাবে তা জানাতে বলা হয়েছিল তাদের। এনএলডিসি বিদ্যুৎ বিভাগের একটি বৈঠকে ভূমিকম্পের মাত্রা ছয় রিখটারস্কেল সুপারিশ করেছে। কিন্তু ছয়মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকা বা আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়। কোন কোন গবেষক বলছেন, এই মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। ওই অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করা না গেলে ক্ষতি আরও বেশি হবে। বৈঠকে বলা হয়েছে মাত্রাটি ছয় এর নিচে নামাতে হবে। ওই মাত্রার ভূমিকম্প হলে যেহেতু কিছু থাকবেই না তাই বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়া না হওয়ায় কিছু আসে যাবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে এনএলডিসিকে পরামর্শক নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। কতমাত্রার মধ্যে ভূমিকম্প হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবে তা পরামর্শক ঠিক করে দেবেন।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. কায়কাউস আহমেদ বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এই ব্যবস্থা এখনই রয়েছে। একটি নির্দিষ্টমাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও হবে না। তবে এনএসডিসিতে একই ব্যবস্থা সংযোজনের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের জানামতে জাপানসহ ভূমিকম্পপ্রবণ কয়েকটি দেশে এই ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষপাতি।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় একটি চিঠি দেয় ওই চিঠিতে বলা হয়, ভূকম্পন সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ ৩টি সিসমিক প্লেটের মধ্যে অবস্থিত। সিলেট সীমান্তে ডাউকি ফল্ট ও টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে ভূমিকম্পসহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে। সাধারণত বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী প্রতি ১০০ বছর পর পর সিসমিক প্লেটের কম্পনে বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন এ অঞ্চলে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি প্রাণঘাতী ভূমিকম্প হয়। সেই হিসেবে ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। নেপালে ২০১৫ সালে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর কাছাকাছি সময়ে এ অঞ্চলে আরও কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সর্বশেষ সভায় ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম সিদ্ধান্ত ছিল ভূমিকম্পে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে নির্দিষ্টমাত্রার ভূমিকম্প হলে ওই লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জানতে চাইলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী বলেন, ঝড়-বৃষ্টি বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ এমনিতে বন্ধ হয়ে যায়। এর ওপর আমাদের সাবস্টেশন এবং ন্যাশনাল লোডডেসপাস সেন্টার ভূমিকম্প সহনীয় করে প্রস্তুত করা হয়েছে। বিষয়গুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে বলাও হয়েছে। এরপরও অধিকতর কিছু করা যায় কিনা তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।