ভূমিকম্প: উৎপত্তিস্থল ঢাকার কাছে আতঙ্ক নয় সতর্কতা দরকার

বিশেষ প্রতিনিধি:
সম্প্রতি ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর হিসেব অনুযায়ী এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪.৩। এই ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, উৎপত্তিস্থল ঢাকা শহরের খুব কাছে এবং ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর আগে যেসব ভূমিকম্প লক্ষ্য করেছি, সেগুলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩৫-৪০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হয়েছে। এই ভূমিকম্পটি সেগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেকটাই অগভীর।
ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, এনিয়ে চিন্তিত হওয়ার বিশেষ কারণ নেই। বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। কিন্তু আট মাত্রা বা তার চেয়ে বড় ধরণের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কম। ছোট ছোট এধরণের ভূমিকম্প অবিষ্যতেও হবে। কিন্তু তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার করণে নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান এনার্জি বাংলাকে বলেন, সাধারণত প্লেটের সীমানা বরাবর ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি থাকে। ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে এবং মিয়ানমার অঞ্চলে প্লেটের সীমানা আছে। ঢাকার আশপাশে প্লেটের সীমানা নেই। প্লেটের মধ্যেই এর অবস্থান। তাই এখানে বড় ধরণের ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা কম। তিনি আরও বলেন, এরআগে ১৮৮৫ সালে গাজিপুরে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার। সাধারণত এই ধরণের ভূমিকম্প একবার হলে তিন চারশ’ বছরের মধ্যে আর হয় না। সেক্ষেত্রেও ঝুঁকি কম বলা যেতে পারে। তাছাড়া ঢাকার মাটি লাল। লাল এই মাটি অনেক ভালো।
তিনি আরও যুক্তি দিয়ে বলেন, আট মাত্রার ভূমিকম্প হতে গেলে প্লেটে অন্তত একশ’ কিলোমিটার ফাটল বা চ্যুতি থাকা লাগবে। বাংলাদেশের কোথাও এতবড় ফাটলের প্লেট নেই।

ঢাকার কাছে যেসব ভূমিকম্প
বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কাছে প্লেটের সীমানা থাকায় এসব এলাকা ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিতে।

ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অথবা ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে।
২০০৮ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে। ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ দোহার থেকে ১৪.২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল।
ঢাকার কাছে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও গত বিশ বছরের মধ্যে একাধিক ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে।
তিন বছর আগে, ২০২০ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের ১২ কিলোমিটার পূর্বে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
২০০৮ এ টাঙ্গাইলের কাছে নাগরপুরে এবং ২০১৯ সালে মির্জাপুরে চার মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হয়েছে বলে বলছে আর্থকোয়েকট্র্যাক। গত ১৫ বছরে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে অন্তত চারবার ভূমিকম্প হয়েছে।
ঢাকার কাছে ফরিদপুরেও গত ১৫ বছরের মধ্যে দুইবার চার মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে।

তবে গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে ঢাকার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে নথিবদ্ধ করা হচ্ছে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে ৫.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্পকে।

বাংলাদেশে সবশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর চ্যুতিতে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে।