মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেই দায়ী!

বগুড়ার শেরপুরে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বেদারুল ইসলাম (৩০) নামে এক লাইনম্যানের মৃত্যু হয়েছে। এসময় তিনি নতুন লাইন নির্মাণ ও মেরামত করছিলেন।
বৃহস্পতিবার (০১ জানুয়ারি) উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের নন্দতেঘরী গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের নতুন লাইন নির্মাণ ও মেরামত কাজ করার সময় বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ২টার মধ্যে বিদ্যুতায়িত হয়ে তারে ঝুলে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর জন্য ওই লাইনম্যান নিজেই দায়ী বলে দাবি করেন বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ মহাব্যবস্থাপক মাশফিকুল হাসান। তিনি জানান, এ মৃত্যুর ঘটনায় তিনি বা তার অফিসের কোনও দায় নেই। আর সেটা হয়ে থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ রয়েছে জেনেও নিহত লাইনম্যান ওভার কনফিডেন্স নিয়ে কাজ করার জন্য নিজ ইচ্ছায় খুঁটিতে উঠে পড়েন। এরপর একপর্যায়ে তিনি বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। তাই তার মৃত্যুর জন্য সে নিজেই দায়ী। তিনি নিহত লাইনম্যানের নাম পরিচয় জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, রাজশাহীর জিএম ট্রেডার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করছিল। নিহতের লাশ বৃহস্পতিবার নাটোর হয়ে রাজশাহীতে নেওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে নওগাঁর নিজ গ্রামে নেওয়া হয়। শুক্রবার (২ জানুয়ারি) নিজ গ্রামে নিহতের লাশ দাফন করা হয় বলে এ কর্মকর্তা জানান।

ঘটনার প্রায় ২৪ঘণ্টা পার হওয়ার পর শুক্রবার বেলা ২টার দিকে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শেরপুর অঞ্চলের সাবেক পরিচালক শফিকুল ইসলাম শফিক নিহতের আংশিক পরিচয় নিশ্চিত করে  জানান, লাইনম্যান বেদারুলের মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ দ্রুত নওগাঁর গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বাসিন্দা।
বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে নিহত লাইনম্যানের নাম জানা গেলেও তার পুরো পরিচয় এখনও অজানাই রয়ে গেছে।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ হাশমী জানান, এটি অবশ্যই একটি চাঞ্চল্যকর মৃত্যুর ঘটনা। তবে কোনো পক্ষই পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেনি। তাই এ ঘটনায় কোন কিছুই করার নেই।
জানা যায়, এক দশমিক আট প্রকল্প থেকে সরকারি বরাদ্দ করা প্রায় ৮ কিলোমিটার (১১ হাজার ভোল্ট) নতুন লাইন নির্মাণের কাজ করছিল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) আওতাধীন রাজশাহীর জিএম ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কোনো মাধ্যমেই এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ভবানীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রওনক স্পিনিং মিলের জন্য সেই লাইন নির্মাণ কাজে এসে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চারজন লাইনম্যানের মধ্যে বেদারুল ইসলাম প্রাণ হারান।
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শেরপুর জোনাল অফিসের বুধবারের (৩১ ডিসেম্বর) দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ি বৃহস্পতিবার (১জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভবানীপুর ইউনিয়নের নন্দতেঘরীসহ আশপাশের এলাকার নির্মাণ কাজ চলবে বলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা্।
বৃহস্পতিবার (১জানুয়ারি) সকাল ৯টায় এ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শেরপুর-২ ছোনকা সাব স্টেশনের অধীনে রওনক স্পিনিং মিলে ভারি সংযোগ দেওয়ার জন্য লাইনম্যানরা তাদের কাজ শুরু করেন।
কিন্তু বিদ্যুতের খুঁটিতে কাজ চলতে থাকাবস্থায় নির্ধারিত সময়ের আগেই কাউকে কিছু না জানিয়ে সেই বন্ধ লাইনে বিদ্যুৎ চালু করা হয়। মুহূর্তে বিদ্যুতায়িত হয়ে তারে ঝুলিয়ে পড়েন লাইনম্যান বেদারুল ইসলাম। এসময় তার চিৎকারে আরেকজন লাইনম্যান খুঁটির মাঝ বরাবর থেকে জীবন বাঁচাতে নিচে লাফিয়ে পড়ে আহত হন।

সৌজন্যে: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম