রমজান ও বিশ্বকাপে বিদ্যুতের লোডশেডিং থাকবে
আসন্ন রমজান ও বিশ্বকাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তবে লোডশেডিং হবেই। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ বাড়লেও নতুন করে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে না। ফলে প্রতি বছরের মতো এবারো রমজানে লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হবেন গ্রাহকরা।
এদিকে বর্তমানে আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কম। এরপরও দিনে কমপক্ষে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। আগামী ১২ জুন থেকে বিশ্বকাপ ফুটবল এবং একই মাসের শেষদিকে রমজান মাস শুরু হবে। তখন দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি থাকবে। ফলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণও বেশি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে বিতরণব্যবস্থার ত্র“টির কারণে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দেখা দিতে পারে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করা হচ্ছে।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছে সরকার। তবে প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া বিতরণ ব্যবস্থার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রই উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। পিডিবি ক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসত।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) নজরুল হাসান সাম্প্রতিক সময়ে ডিপিডিসি এলাকায় লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, নগরজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় ফ্লাইওভার, ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন ও অন্য অনেক সংস্থার কাজ চালু থাকায় ডিপিডিসির মাটির নিচে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। আশা করছি, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।
গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, রমজান মাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের চেষ্টা করা হবে। এমনিতেই গতবারের তুলনায় গ্যাস সরবরাহ বেশি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৮৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। রমজানে চাহিদা বাড়লে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। রমজানেও কিছু বাড়তি গ্যাস পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। চেয়ারম্যান বলেন, রমজানে সিএনজি ও শিল্প কারখানায় গ্যাস রেশনিং করা হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পিডিবি জানায়, বর্তমানে ৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার থাকলেও কারিগরি ত্র“টি এবং জ্বালানি সংকটের কারণে বর্তর্মানে ৬ হাজার ৭০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বিতরণ লস বাদ দিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ৬ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে ৭৭৩ মেগাওয়াট এবং ত্র“টির কারণে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে।
রমজানে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াটের বেশি হবে। এ সময়ের মধ্যে নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে না। ফলে শুধু লোড ম্যানেজমেন্ট করে রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতি হবে না বলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনার পাশাপাশি বিতরণ ব্যবস্থায় ত্র“টি সারানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে আজান, ইফতার, তারাবি, সেহরির সময় এবং খেলা চলাকালে যেন কোথাও লোডশেডিং না হয়, সেজন্য উৎপাদন ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কোনো কর্মকর্তার অবহেলার কারণে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট বা সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়, তবে তার বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায় ।
সূত্র জানায়, প্রতি বছরের মতো এবারো রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ রাখা. মার্কেটে আলোকসজ্জা না করা এবং শীততাপ যন্ত্র (এসি) না চালানোর জন্য দোকান মালিকদের সঙ্গে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। দোকান মালিকরা ১৫ রমজান পর্যন্ত রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার দাবি জানান। ১৫ রমজানের পর থেকে এই নিয়ম শিথিলেরও অনুরোধ করেন।
এছাড়া জোনভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য টিম গঠন, গ্রিড সাবস্টেশন এবং কন্ট্রোলরুমগুলোয় পিক আওয়ারে সিনিয়র প্রকৌশলীদের দায়িত্বে রাখা, কোনো ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন, সবগুলো বিতরণ কোম্পানিকে আগেভাগেই প্রয়োজনীয় ট্রান্সফরমারসহ যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করতে বলা হবে। একই এলাকায় বারবার লোডশেডিং না করা বা লোডশেডিং করতে হলেও শিডিউল আগে থেকেই জনগণকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হবে। তবে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলেও বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় রমজানে লোডশেডিং থেকে মুক্তি পাবে না সাধারণ মানুষ।