রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে শর্ত শিথিল চায় ঠিকাদাররা

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে শর্ত শিথিল চায় ঠিকাদার কোম্পানিগুলো। একইসাথে তারা দরপ্রস্তাব জমা দেয়ার সময়ও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। ভারত, জাপান, চীন, জার্মানী, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ১২টি কোম্পানি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সোমবার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রর প্রাক দরপ্রস্তাব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  আগামীকাল মঙ্গলবারও এবিষয়ে বৈঠক করা হবে।
যেকোম্পানিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দেয়া হবে তার বিশেষ কিছু যোগ্যতাথাকার শর্ত দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যে দেশের হবে তার বাইরের অন্যকোন দেশে ৫০০ মেগাওয়াট বা এরও বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেরঅভিজ্ঞতা থাকতে হবে। টার্নকি পদ্ধতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং তাসফলভাবে এক বছর পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এই সুবিধা দেয়া হবে কিনা তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি।

 

rampal 1
বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চাওয়া আগ্রহী কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, দরপত্রে আর্থিকঅনেক বিষয় অস্পষ্টতা আছে। বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে। একই সাথে দরপ্রস্তাবজমা দেয়ার সময় বাড়াতে হবে। কারণ এটা অনেক বড় প্রকল্প। এখানে মাটি পরীক্ষা, নকশা প্রণয়নসহ অনেক কারিগরি বিষয় জড়িত। যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তা খুবকম। ফিন্যাসিয়াল ক্লোজিং এ বিষয়ে জামানত দেয়ার কথা থাকলেও প্রকল্প বাতিলহলে এর ক্ষতিপূরণ বা দায়ভার কে নেবে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। এছাড়াঠিকাদারকেই এ প্রকল্প বিনিয়োগ যোগাড় করতে হবে। এজন্য প্রকল্পের বিদ্যুৎকেনা, বেচা, বাস্তবায়নসহ সব ধরনের তথ্য উপাত্ত সহজ লভ্য হতে হবে। দরপত্রেঠিকাদারকে এ কেন্দ্র পরিচলানার শর্ত দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টিও পর্যালোচনারদাবি  রাখে। ঠিকাদাররা যন্ত্রপতি আমাদানি, বিনিয়োগ সংক্রান্ত মূসক বিষয়েওজানতে চান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেযোগ্য হলো, ভারতেরভেল, জাপানের মারুবিনি কর্পোরেশন, সিমেন্স ইন্ডিয়া, ভারতের লারসোন এন্ডটার্বো, চীনের হারবিন ইলেক্ট্রিক ইন্টারন্যাশনাল, কোরিয়ার হুন্দাইইলেক্ট্রিক কোম্পানি, চীনের ড্যাং ফ্যাং ইলেক্ট্রিক কোম্পানি, জাপানেরমিটসুহারু মিজোটা সুমিটো, মিতসুবিশি, চীনের সাংহাই ইলেক্ট্রিক কোম্পানি, জার্মানির জিই পাওয়ার এন্ড ওয়াটার কর্পোরেমন এবং ম্যাপল লিপইন্টারন্যাশনাল।
আগামী ১৭ মে এর মধ্রে দরপ্রস্তাব কেনা এবং ১৮ মে এর মধ্যে জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠকেপ্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহীচৌধুরী কোম্পানিগুলোকে যথাসময়ে কেন্দ্র নির্মানের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, এটি ভারত ও বাংলাদেশের শুধু দুই কোম্পানির নয় দুই দেশের যৌথ প্রকল্প।
এটিবাংলাদেশের জাতীয় অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে একটিমাইলফলক রচিত হবে। নেপাল, ভুটান ,মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চাই।এসব দেশে জল বিদ্যুতের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেএসব দেশের সঙ্গে কাজ করা সহজ হবে।

 

rampal 2
রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতেবাংলাদেশ ভারত যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়। এরআগে যৌথভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রকরতে ২০১০ সালে চুক্তি হয়। এরপর কোম্পানি গঠন করে দরপত্র আহবান করে ঠিকাদারকোম্পানি নির্ধারণ করা হচ্ছে।
রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মান করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের মধ্যে একেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
টার্নকি পদ্ধতিতেনির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এ কেন্দ্রটি করবে। বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণের অর্থইপিসির (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট কনট্রাক্ট) মাধ্যমে সংগ্রহ করা যাবেঅথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও করতে পারবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
প্রত্যেক কোম্পানিকে দরপত্র কিনতে এক লাখ টাকা ও দরপত্রের জামানত হিসেবে ১০ লাখ টাকা জমা দিতে হয়েছে।
রামপালবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ করতে হবেচুক্তি করার ৪১ মাসের মধ্যে। আর দ্বিতীয় ইউনিট শেষ করতে হবে ৪৬ মাসেরমধ্যে।
এই কেন্দ্রের ৭০ শতাংশ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। বাকি ৩০ শতাংশ পিডিবি ওএনটিপিসি যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইকেন্দ্র স্থাপনে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর১৫ শতাংশ হিসাবে ৩০ কোটি ২১ লাখ ৮৪ হাজার ডলার দিতে হবে পিডিবিকে।
কর্তৃপক্ষজানিয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রর কারণে সুন্দরবনের পরিবেশের কোনো ক্ষতিহবে না। অত্যাধুনিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।