শিল্পে আবার গ্যাস সংকট

শিল্পে আবার গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। প্রয়োজনের অর্ধেক গ্যাসও পাচ্ছে না শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। দিনে রাতে প্রায় ১২ ঘন্টা বন্ধ রাখতে হচ্ছে উৎপাদন। সাভার আশুলিয়া মানিকগঞ্জ জয়দেবপুর চন্দ্রাসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্প কারখানা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের পর থেকে এই সংকট বেশি হয়েছে। ঐ শিল্প এলাকা থেকে কিছু গ্যাস অন্য এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে বলে সংকট বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরফলে আশপাশের আবাসিক এলাকায় গ্যাস থাকলেও শিল্পে থাকছে না।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ( তিতাস গ্যাস) এর  ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. নওশাদ ইসলাম বলেন, সারকারখানাগুলো সব ঈদের সময় থেকে চালু হয়েছে। প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর যমুনা সারকারখানা চালু হয়েছে। সেখানে দৈনিক সাড়ে চার কোটি ঘনফুট গ্যাস দিতে হচ্ছে। সারকারখানায় গ্যাস দেয়ার ফলে শিল্পে কিছুটা চাপ কমেছে। দ্র“ত এই সমস্যা সমাধান হবে। তিনি বলেন, আমরা রেশনিং এর মাধ্যমে সকল এলাকায় সমানভাবে গ্যাস সরবরাহ করার চেষ্টা করছি।
সিলেট থেকে যে গ্যাস ঢাকা আসছে, এলেঙ্গা থেকে তার একটা অংশ আলাদা হয়ে বঙ্গবন্ধু বহুমুখি সেতু দিয়ে উত্তরাঞ্চলে চলে যাচ্ছে। বাকি অংশ আসছে সাভার হয়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত। ওদিকে ধনুয়া দিয়েও অন্য একটি পাইপে গ্যাস আসছে নারায়ণগঞ্জ হয়ে। দুই দিকেরই শেষ মাথায় সাভার শিল্প এলাকা। যে কারণে সাভারে গ্যাসের চাপ সবচেয়ে কম। এই কম চাপের মধ্যেই নতুন করে আরও সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
আশুগঞ্জে স্থাপিত কম্প্রেসারটির পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি। এলেঙ্গার কম্প্রেসারটিও চালু হয়নি। তিতাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলেঙ্গায় কম্প্রেসার চালু হলে সাভার আশুলিয়া মানিকগঞ্জ এলাকায় গ্যাসের চাপ কিছুটা বাড়বে।
আশুলিয়া থেকে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) সরাসরি গ্যাস সরবরাহের জন্য একক পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। সাড়ে ১৩ কিলোমিটার লম্বা এই পাইপ দিয়ে সরাসরি ইপিজেডে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ নিজ খরচে এই পাইপ লাইন স্থাপন করে নিয়েছে। এতে ইপিজেড-এর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে যে শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে তাদের অবস্থা করুণ।
সাভার এলাকার শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শুধু ইপিজেড-এর ভেতরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যই গ্যাসের নিশ্চয়তা দিলে হবে না। কারণ ইপিজেড এর ভেতরে যত শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে এর বাইরে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে ইপিজেড-এর মতো সেগুলোতেও গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
সূত্র জানায়, আমিনবাজার স্টেশন থেকে ঢাকার একটি অংশসহ সাভার মানিকগঞ্জ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে গড়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। যার ৯০ ভাগই শিল্পে। কিন্তু এই  স্টেশন সংস্কার করে এখান থেকে আড়াই কোটি ঘনফুট গ্যাস অন্য এলাকায়  দেয়া হচ্ছে। এই আড়াই কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিল্প। আগে থেকেই এই এলাকার শিল্পে গ্যাস সংকট ছিল। নতুন করে এখান থেকে অন্য এলাকায় গ্যাস নিয়ে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে।
তিতাসের সাভার আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এই এলাকার মোট সরবরাহ করা গ্যাসের ৯০ ভাগই শিল্পখাতে দেয়া হয়। তারপরও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম আছে।
সাভার-গাজীপুর এলাকায় ৪৮৪ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া ২৫০টি ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ২৫০টি সিএনজি স্টেশন এবং ২১৪টি বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এই এলাকায় আবাসিক গ্রাহক আছে এক লাখ ১০ হাজার ৬৭৩টি। শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে যারা নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছে।
দেশে দৈনিক মোট গ্যাসের চাহিদা  দুই হাজার ৭০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে এখন গড়ে সরবরাহ হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ কোটি ঘনফুট। এরমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪২ শতাংশ, শিল্পকারখানায় ২০, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬, বাসাবাড়িতে ১২, সার উৎপাদনে সাত, সিএনজিতে পাঁচ এবং বাণিজ্যিক কাজে দুই শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। তবে সব সময় এই হিসাব অনুযায়ি সমান তালে গ্যাস সরবরাহ করা হয়না। কখনও কোন একটি খাতে বেশি আবার কখনও কোন একটি খাতে কম গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর সব কিছু ঠিক রেখে রেশনিং করা হয় শিল্পে। যদিও অর্থনৈতিক বিবেচনায় সব সময় শিল্পকে প্রধান্য দেয়া হয়। গ্যাস অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার কমিয়ে আনার কথা বলা হয়। তবু শিল্পে সংকট লেগেই থাকে।