শিল্পে বেশি গ্যাস দেয়ার সিদ্ধান্ত
বিদ্যুৎ উৎপাদনে কমিয়ে শিল্পে বেশি গ্যাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমানো শুরু হয়েছে। এতে কিছু শিল্প এলাকায় গ্যাসের চাপ একটু বেড়েছে। সাথে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও।
পেট্রোবাংলা সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। গ্যাস সংকট নিরসনে পেট্রোবাংলা সোমবার তার বিতরণ সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠক করে। এ বৈঠকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে শিল্পে বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়, সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সিরাজগঞ্জ ও আশুগঞ্জের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া যেসব কেন্দ্রে গ্যাস বেশি লাগে কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয় সে সব কেন্দ্রেও সরবরাহ কমানো হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসন মনসুর বলেন, শিল্পে গ্যাস সংকট থাকবে না। শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েই গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হবে। সারকারখানাগুলো প্রায় ছয় মাস বন্ধ ছিল। এখন আর বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। সার যেমন প্রয়োজন বিদ্যুৎও তেমনই প্রয়োজন। শিল্পেও গ্যাস দিতে হবে।
এর আগে গত রোববার তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ঠ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জানায়, গাজীপুর এলাকার ২৪৫টি কারখানায় গ্যাস না থাকায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে এসব কারখানাগুলো আগামী ঈদে শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিতে পারবে না। এর ফলে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হলে তার জন্য সরকার দায়ী থাকবে। সে সময় গাজীপুরের গার্মেন্টগুলো বন্ধ করে দেয়ার কথাও বলেন তারা।
খুব শিগগিরই শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হবে বলে সে সময় প্রতিমন্ত্রি ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা মানা হয়নি। আপাতত সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ না কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শিল্পের পাশাপাশি রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আবাসিক এলাকাতেও গ্যাস সংকট চলছে। অনেক এলাকায় সকালে গ্যাস চলে যায় আর দুপুরের পরে আসে। সন্ধ্যার পর যথাযথ চাপের গ্যাস পাওয়া যায়।
বর্তমানে দেশের সাতটি সার কারখানার মোট গ্যাসের চাহিদা ২৮ কোটি ৯০ লাখ ঘনফুট গ্যাস। সাধারণত গড়ে প্রায় ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সারখানাগুলোতে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত ছয় মাস গড়ে দেয়া হয়েছে পাঁচ কোটি ঘনফুট করে। আর বাকী ১৫ কোটি ঘনফুট দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও শিল্কেপ্প। গত কয়েকদিন আবার সার কারখানাগুলোতে আগের মতই গ্যাস দেয়া শুরু হয়েছে। কমিয়ে দেয়া হয়েছে শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। নতুন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আরও গ্যাস কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যমুনা সার কারখানায় প্রায় চার কোটি ঘনফুট, ইউরিয়া সার কারখানায় সাড়ে তিন কোটি, পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় এক কোটি, আশুগঞ্জ সার কারখানায় পাঁচ কোটি, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানায় ৪০ লাখ ঘনফুট, কর্ণফুলি সার কারখানায় (কাফকো) চার কোটি এবং ঘোড়াশাল সার কারখানায় এক কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা।
এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা আছে ১৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের। কয়েকদিন আগেও গড়ে ৯০ থেকে ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হত। বুধবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হয়েছে।
সাভার-গাজীপুর এলাকায় ৪৮৪ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া ২৫০টি ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্র, ২৫০টি সিএনজি স্টেশন এবং ২১৪টি বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এই এলাকায় আবাসিক গ্রাহক আছে এক লাখ ১০ হাজার ৬৭৩টি। শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে যারা নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছে।
দেশে দৈনিক মোট গ্যাসের চাহিদা দুই হাজার ৭০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে এখন গড়ে সরবরাহ হচ্ছে দুই হাজার ২০০ কোটি ঘনফুট। এরমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৯ শতাংশ, শিল্পকারখানায় ২০, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬, বাসাবাড়িতে ১২, সার উৎপাদনে সাত, সিএনজিতে পাঁচ এবং বাণিজ্যিক কাজে দুই শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। তবে সব সময় এই হিসাব অনুযায়ি সমান তালে গ্যাস সরবরাহ করা হয়না। কখনও কোন একটি খাতে বেশি আবার কখনও কোন একটি খাতে কম গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর সব কিছু ঠিক রেখে রেশনিং করা হয় শিল্পে। যদিও অর্থনৈতিক বিবেচনায় সব সময় শিল্পকে প্রধান্য দেয়া হয়। গ্যাস অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার কমিয়ে আনার কথা বলা হয়। তবু শিল্পে সংকট লেগেই থাকে।