সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: বিদ্যুৎ নেই অনেক ভবনে, দাপ্তরিক কাজও বন্ধ

বিডিনিউজ:

সচিবালয়ে গভীর রাতে লাগা আগুন ১০ ঘণ্টা পর নেভানো গেলেও কয়েকটি ভবনে বিদ্যুৎ ছিল না বৃহস্পতিবার দিনের বেশিরভাগ সময়।

বিকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় প্রশাসনের এ প্রাণকেন্দ্রে এদিন দাপ্তরিক কাজকর্ম ছিল কার্যত বন্ধ।

আগের দিন ছিল বড় দিনের ছুটি। আর বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। অফিস সূচি অনুযায়ী সকালেই সচিবালয়ে হাজির হন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা। কিন্তু কেবল একটি গেইট খোলা থাকায় সামনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের জটলা তৈরি হয়।

সেই ভিড় পেরিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে ঢুকলেও দাপ্তরিক কার্যক্রম না হওয়ায় অনেকেই আবার বেরিয়ে পড়েন। লিফট বন্ধ থাকায় বিভিন্ন উঁচু ভবনে না উঠে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীকে ভেতরের উন্মুক্ত স্থানে বসে থাকতে দেখা যায়।

তবে যেসব ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল, সেখানে কার্যক্রম চলার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

স্বাভাবিক সময়ে ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর গেইট খোলা থাকলেও এদিন কেবল ৫ নম্বর গেইট খোলা রাখা হয়। সেখান সবাইকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় পরিচয়পত্র দেখে। পরে ওই গেইট দিয়েই অনেকে বেরিয়ে আসেন।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ভবনে আগুন না লাগলেও পুরো ভবন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। আমরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে আসছি। ভেতরে বিদ্যুতও নেই।”

তবে দুয়েকটি ভবনে জেনারেটর চলছে জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হৃদয় মাহমুদ চয়ন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এখানেও জেনারেটর চলছে। আমরা মিটিং করেছি।”

বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়।

দশ তলা ওই ভবনেই অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৬, ৭, ৮  এই  তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মী দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ভবনের অনেকখানি পুড়ে গেছে আগুনে। ভেতরে বিদ্যুৎ নেই। পোড়া গন্ধ ভাসছে। দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ। আমরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বেরিয়ে এলাম।“

সচিবালয়ে প্রবেশের পাঁচটি প্রবেশমুখেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। কেউ ভেতরে ঢুকলেই করতে হচ্ছিল জবাবদিহি। আর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। কোনো দর্শনার্থী এদিন সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি পাননি।

দুপুর ২টার দিকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আইন শৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীর অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সচিবালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ফাঁকা। কর্মকর্তারা দলে দলে বেরিয়ে আসছেন। পুলিশ নতুন করে কোনো মানুষকে ঢুকতে দিচ্ছে না।

৩ নম্বর গেইটে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই গেইট দিয়ে কেবল উপদেষ্টা ও সচিবরা প্রবেশ করতে পারছেন। অন্য অফিসারদের আমরা ফেরত পাঠাচ্ছি। এভাবেই আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৫ নম্বর গেইট দিয়ে পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, “দুপুর ১২টার দিকে অনেক চেষ্টায় ভেতরে ঢুকলেও কোনো কাজ করা যায়নি। বিদ্যুৎ ছিল না। জেনারেটর চালু করা হলেও তা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুম ছাড়া অন্য রুমে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি।”

সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থানরত একজন সাংবাদিক জানান, বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ ৭ নম্বর ভবন ছাড়া বাকি সবগুলো ভবনে বিদুৎ সরবরাহ শুরু হয়। তবে সারাদিনে ভেতরে কোনো দাপ্তরিক কাজ হয়নি। অধিকাংশ দপ্তরের কলাপসিবল গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।