সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানির নতুন শর্ত মানা হবে না
গভীর সমুদ্রে তিনটি ব্লকে খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বিদেশী কোম্পানিকে আর সময় দেয়া হবে না। তাদের দেয়া নতুন শর্তগুলোও আর মানা হচ্ছে না। আগামী এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের আর কোন শর্ত মানা হবে না।
গভীর সমুদ্রের ১২, ১৬ ও ২১ নম্ব ব্লকের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ঠ কোম্পানির সাথে সারাসরি আলোচনা করা হবে। তখন তাদের শর্তগুলো বিষয়ে পেট্রোবাংলার অবস্থান জানানো হবে। এতে সম্মত থাকলে পিএসসি করা হবে। না হলে বাতিল করা হবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গভীর সমুদ্রের ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকে খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য কনোকোফিলিপস ও স্টেটঅয়েলকে যৌথভাবে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন তারা চূড়ান্ত চুক্তি করেনি। গত এপ্রিল মাসে তারা এই ব্লকে কাজ করবে না বলে জানায কনোকো। তবে স্টেটঅয়েল একা কাজ করবে বলে জানায়। স্টেটঅয়েল মে মাসে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের শর্ত মানা হলে শতভাগ অংশীদার হিসেবে এই তিন ব্লকের জন্য চুক্তি করবে। তাদের শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল, নতুন করে গ্যাসের দাম নির্ধারণ। পিএসসি অনুযায়ি যে দামে তাদের কাছ থেকে পেট্রোবাংলা গ্যাস কেনার কথা তা আরও বাড়াতে হবে। এছাড়া পিএসসি অনুযায়ি, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের তারিখ থেকে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করার কথা। কিন্তু তারা চুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকে সমন্বয় করার শর্ত দিয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, এই শর্ত মানা সম্ভব হবে না। কারণ এক কোম্পানিকে সুবিধা দিলে অন্য সকল কোম্পানিকেও দিতে হবে। তাছাড়া এই সুবিধা দিতেও অনেক সময় লেগে যাবে। এসব শর্ত মেনে পিএসসি সংশোধন করতে হলে মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।
সূত্র জানায়, স্টেটঅয়েল এর সাথে চুক্তি না হলে গভীরসমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম তিন বছর পিছিয়ে যাবে। ২০১২ সালে তাদের সাথে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। এখন নতুন করে আবার দরপত্র আহবান করে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। তাছাড়া সমুদ্রাঞ্চলে দ্বিমাত্রিক জরিপের জন্য এই তিন ব্লক রাখা হয়নি। ফলে এই জরিপে ব্লক তিনটির ভূগঠন, প্রকৃতি ইত্যাদি তথ্য অজানা থেকে যাবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, শর্ত না মানার কারণে তিন বছর নষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন পিএসসি আকর্ষনীয় করতে হবে। বিদেশী কোম্পানি যেন আর অন্য দেশে না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মিয়ানমারের আদলে পিএসসি করার পরামর্শ দেনি তিনি।
এরআগে গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক কনোকোফিলিপস নিয়েও ছেড়ে দিয়েছে। কোন কাজ করেনি। এরআগে একবার পিএসসি সংশোধন করে কনোকোর জন্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছিল। তবু তারা চুক্তি করেনি। সংশোধিত পিএসসিতে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উৎপাদনের পর, বছরে দুই শতাংশ হারে দাম সমন্বয়ের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। একই সাথে বাড়ানো হয়েছিল গ্যাসের দাম। তাদেরকে নিজের অংশের গ্যাসের অর্ধেক পেট্রোবাংলার অনুমতি ছাড়াই দেশের মধ্যে তৃতীয় কোন পক্ষকে বিক্রির সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া কর্পোরেট কর থেকে অব্যাহতি, বছরে সর্বোচ্চ ৭০ ভাগ খরচ তুলে নেয়া এবং পাইপলাইন ব্যবহারের উপর দেয়া ট্যারিফ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তারপর আরও সুবিধা চেয়েছে স্টেটওয়েল।