সমুদ্রে খনিজ অনুসন্ধানের আগে জরিপ

সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহবানের আগে সেখানে বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে জরিপ করানো হবে। বিদেশী কোম্পানি সমুদ্রে দ্বিমাত্রিক ভূমি জরিপ করবে। এই জরিপে বাংলাদেশ কোন বিনিয়োগ করবে না। জরিপে যে তথ্য পাওয়া যাবে তার মালিক থাকবে বিদেশী কোম্পানি। সংশ্লিষ্ট বিদেশী কোম্পানিরই শুধু সেই তথ্য বিক্রি করার ক্ষমতা থাকবে। তারা তথ্য বিক্রি করে বিনিয়োগের অর্থ তুলে নেবে। এধরনের চুক্তি বাংলাদেশে এই প্রথম হতে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানের আগে জরিপ করতে বিদেশী কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হবে। অনেকটা উৎপাদন বন্টন চুক্তির আদলে এই চুক্তি করা হবে। তবে এর সাথে উৎপাদন বন্টন চুক্তি’র কোন সম্পর্ক থাকবে না। এদিকে সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহবান করতে একই সাথে তৎপরতা চলছে। জরিপ এবং অনুসন্ধানে দরপত্র আহবান দুটোই একসাথে হবে বলে পেট্রোবাংলা সহৃত্র জানিয়েছে।
অনুসন্ধানের আগে জরিপ করতে বিদেশী কোম্পানির সাথে যে চুক্তি করা হবে তার এটা খসড়া করা হয়েছে। খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার পর জ্বালানি বিভাগের অনুমোতি নিয়ে পেট্রোবাংলা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আইন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে।
পেট্রোবাংলা সহৃত্র জানায়, চুক্তির পরে প্রায় ১৮ মাস সময় লাগবে জরিপ শেষ করতে। এক বা একাধিক কোম্পানিতে এলাকা ভাগ করে জরিপ করার অনুমতি দেয়া হতে পারে। কোন অংশ কিভাবে কাজ দেয়া হবে তা এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। এই কোম্পানি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দরপত্র আহবান করা হতে পারে।
খসড়া অনুযায়ি, বিদেশী যে কোম্পানির সাথে চুক্তি হবে তারাই এই তথ্যের মূল মালিক থাকবে। বাংলাদেশের এই তথ্য বিত্রিক্রর কোন অধিকার থাকবে না। বাংলাদেশ এই জরিপে কোন বিনিয়োগও করবে না। সম্পূর্ণ নিজস্ব বিনিয়োগে তথ্য সংগ্রহ করবে বিদেশী কোম্পানি। পরে তথ্য বিক্রি করে তারা বিনিয়োগের অর্থ তুলে নেবে। তবে যতবার তথ্য বিক্রি করবে ততবার বাংলাদেশকেও বিক্রি মূল্যের একটি অংশ দেবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবিষয়ে জানান, সমুদ্রে দরপত্র আহবান করতে অনেক তথ্যের প্রয়োজন হয়। আমাদের কাছে সেই তথ্য নেই। এসব তথ্য সংগ্রহ করতে সমুদ্রে জরিপ করানো হবে। তথ্যগুলো থাকলে সমুদ্রে অনুসন্ধান কাজে অনেক কোম্পানি আগ্রহী হবে। এসব তথ্য বিদেশী কোম্পানির কাছে বিক্রিও করা যাবে। সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহবান প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে খুব তাড়াতাড়ি দরপত্র আহবান করা হবে। এজন্য বিদেশী কোম্পানি দিয়ে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করতে দ্বিমাত্রিক জরিপ করার সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া হয়। বাংলাদেশে এধরণের কাজ এই প্রথম করা হচ্ছে। সাধারনত যে কোম্পানির সাথে উৎপাদন বন্টন চুক্তি করা হয় তারাই দ্বিমাত্রিক কিংবা ত্রিমাত্রিক জরিপ করে তথ্য নিয়ে থাকে। ভূকাঠামোসহ অন্য কিছু তথ্য পেট্রোবাংলা দেয়। এবার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের আগেই বিদেশী কোম্পানি নিয়ে দ্বিমাত্রিক জরিপ করা হচ্ছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ হওয়ার পর এলাকা ভাগ করেছে পেট্রোবাংলা। সমুদ্রের কোন কোন এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধান হবে তা ভাগ করা হয়েছে। গভীর ও অগভীর সমুদ্রে যেসব এলাকায় এখনও কোন অনুসন্ধান হয়নি পুরোটা জুড়েই অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহবান করা হবে। চলতি বছর ভারতের সাথে আর দুই বছর আগে মিয়ারমারের সাথে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ হয়েছে। বাংলাদেশের জলসীমা নির্ধারণ করে নতুন মানচিত্র তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর গভীর ও অগভীর সাগরের মোট ১২টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে গভীর সাগরের তিনটি ব্লকের জন্য কোন আন্তর্জাতিক কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়নি। শুধু অগভীর সাগরের ৯টি ব্লকের জন্য দর প্রস্তাব জমা পড়ে। প্রাথমিক বাছাইয়ে সাত নম্বর ব্লকে কনোকো এবং চার ও নয় নম্বর ব্লকে ওএনজিসিকে নির্বাচিত করা হয়। গতবছরের ২৮শে মে আবার অগভীর সাগরের ছয়টি ব্লকের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। এতে শুধু ১১ নম্বর ব্লকের জন্য স্যান্টোস ও ক্রিস এনার্জি যৌথভাবে দর প্রস্তাব দাখিল করে।