সমুদ্রে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে গ্যাসের আধার পেয়েছে কনোকো
গভীর সমুদ্রে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে গ্যাসের আধার (কাঠামো) পেয়েছে কনোকো ফিলিপস। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে পাঁচ থেকে সাত ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ থাকতে পারে। দ্বিমাত্রিক জরিপ শেষে এই ধরণার কথা বলা হয়েছে। তবে ত্রিমাত্রিক জরিপ ও কূপ খননের আগে কখনই মজুদের বিষয়টি নিশ্চত করা সম্ভব নয়।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বুধবার বলেন, কনোকো ফিলিপস ধারণা করছে সমুদ্রে পাঁচ থেকে সাত ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদের সম্ভাবনা আছে। এখান থেকে কোম্পানিটি গ্যাস উত্তোলন করতে চায়। এই গ্যাস পাওয়া গেলে আগামী আট নয় বছর বাংলাদেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
মাটির নিচে গ্যাস মজুদ হতে গেলে শক্ত পুরু পাথরের একটি আস্তরণ থাকতে হয়। এই মোটা পুরু পাথরের আস্তরণ সাধারণত অনেকটা জায়গা নিয়ে অর্ধবৃত্তাকার হয়ে থাকে। যার নিচে গ্যাস আটকে থাকে। যাকে ‘আধার’ বা আস্তরণ বলে। এমন আধার বা আস্তরণ বা কাঠামো থাকলেই যে সেখানে গ্যাস থাকবে তা নয়। গ্যাস না থেকে সেখানে পানিও থাকতে পারে। বা অন্য কিছুও থাকতে পারে। এই কারণে কূপ খননের আগে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় মাটির নিচে কি বা কতটা মজুদ আছে।
২০১১ সালের ১৬ জুন সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) করে পেট্রোবাংলা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে এই ব্লকের অবস্থান। গত বছর ওই দুই ব্লকে দ্বিমাত্রিক জরিপ করে প্রতিবেদন জমা দেয় কনোকো। প্রতিবেদনে একটি ব্লকের একটি অংশে তেল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ ২০ ভাগ সম্ভাবনার কথা বলছে তারা। এ অবস্থায় গত এপ্রিল মাসে তারা আর বিনিয়োগে আগ্রহী নয় বলে পেট্রোবাংলাকে জানায়। হঠাৎ করেই চলতি মাসে কোম্পানিটি পেট্রোবাংলার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা না করেই সরাসরি সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে।
এদিকে এই গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখে কনোকো ফিলিপস গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা উৎপাদন অংশীদারী চুক্তি (পিএসসি) সংশোধন করে দাম বাড়ানোর জন্য মৌখিকভাবেও প্রস্তাব দিয়েছে।
পেট্রোবাংলার উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কনোকো ফিলিপসের সাথে যদি পিএসসি সংশোধন করে দাম পরিবর্তন করা হয় তবে বাংলাদেশে কাজ করা প্রত্যেক বিদেশী কোম্পানি দাম বাড়াতে বলবে। ফলে যে পিএসসি হয়ে গেছে তা সংশোধন করার সুযোগ নেই।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনুসর এবিষয়ে বলেন, পিএসসি সংশোধন করে গ্যাসের দাম পরিবর্তন করার নজির বাংলাদেশে নেই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস উত্তোলনের জন্য মার্কিন কোম্পানিটি তাদের উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) কিছু পরিবর্তন চান। তারা মিয়ানমারের পিএসসির আদলে বাংলাদেশের সঙ্গে গ্যাসের মূল্যসহ অন্য সুযোগ সুবিধা চায়। গ্যাসের দাম ছাড়াও গভীর সাগরের যেখানে গ্যাস পাওয়া যাবে সেখান থেকে স্থলভাগে গ্যাস আনার জন্য যে পাইপ নির্মাণ করা হবে তার খরচ বাংলাদেশকে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কনোকো।
প্রতি হাজার ঘনফুট (এক ইউনিট) গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয় চার ডলার দুই সেন্ট করে। পরবর্তীকালে গভীর সমুদ্রে ইউনিট প্রতি সাড়ে ছয় ডলার দাম নির্ধারণ করে পিএসসি ২০১২ নির্ধারণ করা হয়। এখন এই সাড়ে ছয় ডলার থেকেও বেশি দাম চাই কনোকো।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কনোকো এখন কাজ শুরু করলে এই গ্যাস পেতে নয় বছর সময় লাগবে। ওই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বর্তমানের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। তখন সাত ডলারে গ্যাস কিনলেও সমস্যা হবে না। আর কনোকোর কাছ থেকে যে পরিমাণ ভ্যাট ট্যাক্স পাওয়া যাবে তাতে গ্যাসের দাম গড়ে পাঁচ ডলারের বেশি হবে না।