সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অগ্রগতি নেই

বিদ্যূৎ খাত উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হলেও বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজই শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ। তিন বছর পার হয়ে গেলেও অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজই শুরু করা যায়নি। তবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে কিছু কাজ হয়েছে।
রোববার বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, নতুন অর্থ বছরের দুই মাস শেষ হয়েছে। ৬৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৪০টির কোন কাজই শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ঠরা। যেসব চলমান প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ আছে, সেসবের কাজও শুরু হয়নি।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলামসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে আরও দুই বছর আগে।
সূত্র জানায়, যথাযথভাবে প্রকল্প না হওয়াতে প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্ঠ প্রকল্প পরিচালকদের উপর নাখোশ হন। তিনি প্রকল্প পরিচালকদের দ্রুত ও বাস্তবতার সাথে মিল করে কাজ করার তাগিদ দেন। কিছু প্রকল্পের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হলে তা না বাড়িয়ে বরং বাতিল করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, টাকার সমস্যা নেই। কিন্তু আপনারা টাকা খরচ করতে পারেন না। দ্রুত টাকা ছাড় হলেও তা খরচ করতে পারেন না। এজন্য ঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ করা যায় না।
সূত্র জানায়, সরকারিভাবে নেয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটিরও সন্তোষজনক কাজ হয়নি। বেশিরভাগ কেন্দ্রর কাজই শুরু হয়নি। অথচ উৎপাদনে আসার নিদিষ্ট সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিন বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখনও কাজ হয়েছে মাত্র ১০ ভাগ।
২০১২ সালে শুরু করে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ শতাংশ কাজ হয়েছে শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের। কুয়েতের অর্থায়নে স্থাপন করা এই কেন্দ্র থেকে ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা। তিন বছরে এই কেন্দ্রর জন্য মাত্র সাত লাখ ৩৬ হাজার টাকা খরচ করতে পেরেছে।  শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কাজও শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কাজই করতে পারেনি। শাহজীবাজার ১০৫ মেগাওয়াটের অবস্থাও একই। বাঘাবাড়িতে ১০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র স্থাপন করতে চুক্তি করা হয়েছে ২০১৩ সালে। এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্রের কোন কাজই হয়নি। চলতি অর্থ বছরে এই কেন্দ্র স্থাপনে ৭৫ লাখ টাকা ছাড় হয়েছে। কিন্তু গেল দুই মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। একইভাবে বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট, বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২২৫ মেগাওয়াট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে এখনও পর্যন্ত কোন কাজই হয়নি। এগুলো প্রায় সব ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়েছে।
হাতিয়াতে ২০১৪ সালের মধ্যে বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার কথা ছিল। ২০১২সালে এই বায়ু বিদ্যুৎ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। গত অর্থ বছর ২৫ লাখ টাকা খরচও করা হয়েছে। কিন্তু এখন তা বাদ দেয়ার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এখানে ৮৬ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাটারি কিনতে হবে। প্রকল্পটি বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশনের রাস্তায় সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করার কাজ শুরু করা হয় ২০১২ সালে। কিন্তু এখনও এই কাজ শেষ হয়নি। চলতি অর্থ বছরেও এর কোন কাজ শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা। ১০ শহর বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা এবছরের জুন মাসে। কিন্তু তা হয়নি। ২০০৪ সালে শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু গতকালের বৈঠকে তা আর না বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়া হয়। চুক্তি বাতিল করে পিডিবির নিজস্ব অর্থে প্রকল্প শেষ করার পরামর্শ দেয়া হয়। একই সাথে বাংরাদেশ সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্পও বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজ না হলেও সঞ্চালনে কিছুটা এগিয়েছে। পিজিসিবি ইতিমধ্যেই তাদের প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতি করেছে বলে জানা গেছে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আনতে সঞ্চালন লাইনের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য প্রকল্পেও তারা চলতি অর্থবছরের দুই মাসে গড়ে প্রায় ২০ ভাগ কাজ করেছে।