সামিট গাজীপুর-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য ১৪০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেল
সামিট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সামিট গাজীপুর-২ পাওয়ার লিমিটেড ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক হাজার ১৯০ কোটি টাকার দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন পেলো। সিঙ্গাপুরের ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল এবং জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক – সুমিতোমো মিতসুই ব্যাংকিং কর্পোরেশন (“এসএমবিসি”) এই অর্থায়ন করছে। এটি বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
দেশের বেসরকারি খাতে সামিট প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিনিয়োগ পেল। আগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন খাতে বিদেশী বিনিয়োগের পুরোটুকু বা অধিকাংশই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন ডিইজি, এফএমও, আইএফসি, এডিবি, আইএসডিবি, সিডিসি ইত্যাদি বা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তাদের থেকে এসেছিলো।
এই অর্থায়ন সম্পন্ন হয় ২২ শে এপ্রিল, যখন বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুর উভয় দেশে ছিলো লকডাউনের মধ্যে। অর্থায়ন প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে চলমান লকডাউনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অনুমোদন প্রদানের মাধ্যমে বিশেষ সহায়তা করেছে।
সামিট গ্রুপ এর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের কাছে থেকে এই স্বল্প মূল্যের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প অর্থায়ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে সামিট এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মর্যাদা এবং সুনামের প্রতিফলন। তিনি বলেন, আমাদের গ্রাহক এবং ঋণদাতাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ এবং নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাবো।
ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অদ্রা লো বলেন, ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল সিঙ্গাপুর ভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নকারি প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা সম্প্রসারণের সহযোগী হতে পেরে আনন্দিত। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থায়নের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক কোম্পানীদের তাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিনিয়োগে সহায়তা করা, আমাদের অর্থায়নের জ্ঞান, সমন্বয় করার সক্ষমতা এবং আমাদের বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের অভিজ্ঞতা দিয়ে। এছাড়া সিঙ্গাপুর অবকাঠামো অর্থায়নের জন্য একটি অনন্য গন্তব্য যেখানে অর্থায়নের পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতা এবং পরামর্শদাতাদের কেন্দ্র – এটি তারই একটি নিদর্শন।
সুমিতোমো মিতসুই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্ট্রাকচারড ফাইন্যান্স বিভাগের হেড অফ পাওয়ার, রিনিউয়েবলস এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার জীন সো বলেন, এই লেনদেনের মাধ্যমে আমাদের মূখ্য গ্রাহক সামিট কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা আনন্দিত এবং এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতেও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ লেনদেন সম্পন্ন করতে পারায় আমি পুরো দলকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমরা এসএমবিসি এবং সামিট কর্পোরেশনের মধ্যে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক প্রত্যাশা করছি।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশী ব্যাংক যেমন – ব্যাংক এশিয়া, দ্য সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ইতঃপূর্বে সামিট গাজীপুর-২ পাওয়ার লিমিটেডের প্রকল্প নির্মাণ অর্থায়ন করেছিলো এবং পরবর্তীকালে এই দীর্ঘমেয়াদী ঋণ থেকে তাদের অর্থায়ন পরিশোধ করা হয়। সামিট আশা করছে চলমান লকডাউন শেষ হওয়ার পরপরই অর্থায়নের সর্বশেষ কিস্তি পাবে।
সামিট গাজীপুর-২ পাওয়ার লিমিটেড, সামিট কর্পোরেশন এবং সামিট পাওয়ার লিমিটেডের যৌথ মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে বৃহত্তম জ্বালানী তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোং লিমিটেড (এসওএসসিএল)-এর সাথে দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানী সরবরাহ চুক্তি করে এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি)-এর সাথে ১৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এই প্রকল্পটি মাত্র ৯ মাসের বাস্তবায়নের মধ্যে ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে ১০ই মে ২০১৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎউৎপাদন শুরু করে এবং তখন থেকেই বাংলাদেশের বিদ্যুত ঘাটতির প্রেক্ষিতে জাতীয় গ্রীডে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে।
সামিট বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহত্তম স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উপাদনকারি প্রতিষ্ঠান (আইপিপি), যার বিদ্যুৎ উপাদন ক্ষমতা ১,৯৪১ মেগাওয়াট। বর্তমানে আরও একটি ৫৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ৩,০০০ মেগাওয়াট পরিকল্পনাধীন রয়েছে। এছাড়াও সামিট, একটি এলএনজি ভাসমান সংরক্ষণাগার এবং পুনঃ গ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ) পরিচালনা করছে যা বাংলাদেশের জাতীয় গ্রীডে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট রিগ্যাসিফাইড এলএনজি (এমএমসিএফডি) সরবরাহ করছে। সম্প্রতি জাপানের বৃহত্তম জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান জেরা সামিটের ২২ শতাংশ মালিকানায় বিনিয়োগ করেছে। এর আগে সামিট, মিতসুবিশি কর্পোরেশন এর কাছে এফএসআরইউ প্রকল্প কাছে বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালিকানায় ইক্যুয়িটি বিনিয়োগ পেয়েছে।
টোকিওভিত্তিক সুমিতোমো মিতসুই ব্যাংকিং কর্পোরেশন জাপানের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সুমিতোমো মিতসুই ফাইনান্সিয়াল গ্রুপের (এসএমএফজি) অন্যতম সদস্য। এসএমএফজি-তে আমরা আমাদের নেটওয়ার্কে ব্যক্তিগত, কর্পোরেট এবং বিনিয়োগ ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য কাজ করি যা বিস্তৃত রয়েছে এশিয়ায় ১৬টি সহ বিশ্বের ৪০টি দেশ এবং অঞ্চল জুড়ে ।
ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল সিঙ্গাপুর সরকারের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এটি সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানিসমূহকে আন্তর্জাতিক পরিসরে সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টির ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানিসমূহকে অবকাঠামো ও সমুদ্র-বাণিজ্য খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক ও বিশেষায়িত প্রকল্প অর্থায়ন, সম্পদ-সমর্থিত ও অন্যান্য ঋণ অর্থায়নমূলক সেবা দেয়। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন খাতে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক আর্থিক সেবা দিয়েছে। অ-ব্যাংক আর্থিক সেবাদাতা হিসেবে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ অর্থায়নের ক্ষেত্রে ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল ক্লায়েন্টদের প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক সেবাদানে সক্ষম।