সিস্টেম লস, কর আর চুরি বন্ধ করলে বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়ানো লাগে না: ক্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিস্টেম লস কমানো, কর প্রত্যাহার, চুরি বন্ধ আর সাশ্রয়ী কিছু উদ্যোগ নিলে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের ঘাটতি সমন্বয় সম্ভব। তাতে আর দাম বাড়ানো লাগবে না।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (প্রস্তাবিত)’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাব দেয়া হয়।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেন ক্যাবের সহসভাপতি ড. শামসুল আলম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের জ্বালানি অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। বিশ্বজুড়েই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। জ্বালানিতে ভর্তুকি বা সমন্বয় যা হোক, দাম সাশ্রয়ী রাখাই সরকারের মূল লক্ষ্য।
ক্যাবের প্রস্তাবে বলা হয়, বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এ মুনাফা বিইআরসি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ও লুণ্ঠনমূলক। গ্যাসের চুরি কমানো গেলে দৈনিক ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করতে হতো না। চুরি কমানো, উৎস ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হলে জ্বালানিতে ভর্তুকি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। লুণ্ঠনমূলক খরচ এবং অবচয় ব্যয় সমন্বয় হলে ভর্তুকি কিংবা মূল্যবৃদ্ধি কোনোটারই প্রয়োজন পড়ে না। বরং ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম ১৬ পয়সা কমানোর সুযোগ আছে।
বিদ্যুৎ খাতের বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৭০ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালানো গেলে নিট উৎপাদন বাড়ে ৪১২ কোটি ইউনিট। এতে নিট খরচ কমবে ২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে ফার্নেস অয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্লান্ট ফ্যাক্টর কমানো হলে ৫ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা খরচ কমবে। পাইকারি বিদ্যুতে নতুন করে করারোপ না করলে ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। আমদানি পর্যায়ে ফার্নেস অয়েলের ওপর শুল্ক কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করায় ৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। এসব সমন্বয়হীনতা দূর করা গেলে বিদ্যুতে ১১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা ঘাটতি কমানো যায়।
শামসুল আলম আরও বলেন, ইকুইটির ওপর পিডিবি ৩ শতাংশ, পাবলিক কোম্পানি ১২ শতাংশ, যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি ১৬ শতাংশ মুনাফা পাচ্ছে। কুইক রেন্টালের তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয়, তাদের মুনাফা ১৮ শতাংশের কম নয়। বিইআরসির মানদণ্ডে এই মুনাফা ৭ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। এখানে মুনাফা কমানো গেলে খরচ সাশ্রয় হয়।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের লক্ষ্য নির্ধারিত- কাদের জন্য ভর্তুকি দিতে হবে, কত দিতে হবে। কারণ দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিদ্যুতের মূল্য দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তাই ভর্তুকি দেওয়া হয়, তবে একে আমি ভর্তুকি বলি না। বলি বিনিয়োগ। সারে ভর্তুকি দেওয়া হয় বলে করোনাকালেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল দেশ।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ক্যাব প্রত্যাশা করে, সরকার সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করতে কার্পণ্য করবে না। যতটুকু দেখা যায়, তাতে মনে হয়, মিতব্যয়িতার ঘাটতি রয়েছে। খরচ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা গেলে অনেক সাশ্রয় হতো। জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সংকট থেকেই যাবে। তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়ছে; মানুষের অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে মানুষের মনের আগুন দাবানলে রূপ নিতে পারে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, আজকের এ সংকটের মূলে হচ্ছে চড়া এলএনজি আমদানি।
যদি যথাযথভাবে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান হতো তাহলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করতে হতো না। বঙ্গবন্ধু সরকার ছাড়া আর কোনো সরকার গ্যাস অনুসন্ধানে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারেনি।
আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূইয়া, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনসহ অন্যরা।