সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেই

গ্রিড বিপর্যয়ে একের পর এক তদন্ত কমিটি হচ্ছে। কিন্তু কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দুর্ঘটনা ঘটছে। আর তা কেন হচ্ছে সেটা বের করতে কমিটি হচ্ছে। কিন্তু দুর্ঘটনা থামছে না।
মঙ্গলবার হরিপুরে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনায় আবারো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। চার সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে পিজিসিবি’র প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসানকে। বুধবার পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) কর্তৃপক্ষ এই কমিটি গঠন করে।
মঙ্গলবারের বিপর্যয়ে সিদ্ধিরগঞ্জসহ ঢাকার মানিকনগর, উলন, নারিন্দা, বঙ্গভবন এবং ধানমন্ডি উপকেন্দ্রর আওতায় যে সব এলাকা তার পুরোটাতে বিদ্যুৎ ছিল না।  এছাড়া ঐ সঞ্চালন লাইনের উপর নির্ভর শ্যামপুর, মুন্সিগঞ্জ, মদনগঞ্জ, সোনারগাঁও উপকেন্দ্র এলাকাতেও বিদ্যুৎ ছিল না।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে নারায়গঞ্জের হরিপুর জাতীয় বিদ্যুতের গ্রিড বিপর্যয় হয়। এরআগে ৯ মার্চ আশুগঞ্জে একবার গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল। সে দিন প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কেন্দ্র এক সাথে বন্ধ হয়েগিয়েছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে একসঙ্গে কয়েকটি জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে সেদিন চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছিল। এজন্য বড় ধরণের বিপর্যয় হয়নি।
১ নভেম্বরের মহাবিপর্যয়ের পরে দুটো বিপর্যয় হল। তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়েছে বলে তা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। না হলে এসব দিনেও একই ধরণের বিপর্যয় হতে পারতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রকৌশলীরা।
গত ৯ মার্চ আশুগঞ্জে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর আগে গত ১ নভেম্বরে পুরো গ্রিড বিপর্যয়ের সময়ও কমিটি হয়েছে। একের পর এক কমিটি করা হয়েছে। তারা প্রতিবেদনও জমা দিচ্ছে কিন্তু তাদের কোনো সুপারিশ কার্যকর করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে একের পর এক উদ্যোগ থাকলেও বিতরণ ও সঞ্চালনের বিষয়ে সন্তষজনক কিছু নেই।
১ নভেম্বর সারাদেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর তদন্ত কমিটি ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে যে কোন সময় আবার বড় ধরণের বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েই গেছে। যে সুপারিশগুলো মৌখিকভাবে পালন করা সম্ভব সেগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু যেগুলো করতে সংস্কার প্রয়োজন তা, হয়নি। জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে গঠিত কমিটি তিন মাসের মধ্যে ২২টি কাজ করার সুপারিশ করেছিল।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, অবশ্যই সঞ্চালন লাইন শক্তিশালী করতে হবে। এবার দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পারলেও ভবিষ্যতে আরও বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটতে পারে। দ্বিতীয়বার হওয়াটাই আশ্চর্যজনক। প্রথমবারই উচিত ছিল সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা। তিনি বলেন, শুধু উৎপাদন নয়, গ্রিড লাইন শক্তিশালী করারও জরুরী।