সেচের পানি থেকে বিদ্যুৎ
ধানক্ষেতে যে পানি দেয়া হচ্ছে তা থেকেই তৈরী হবে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ তৈরী করে সেই পানি চলে যাবে ক্ষেতে। শুধু ব্যবহার হবে পানি পড়ার গতি। পানির ধাক্কায় ঘুরতে থাকবে পাখা। পাখার ঘুর্ণিতে ঘুরবে টার্বাইন। আর টার্বাইন ঘোরা মানেই তৈরী হতে থাকবে বিদ্যুৎ।
এমনই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্র। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আশরাফুল আলম ও পানি সম্পদ বিভাগের তাকভীরুল আলম খান। তারা স্যালো মেশিনের পড়তে থাকা পানি থেকে বিদ্যুৎ তৈরীর যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন।
বাংলাদেশে যে কয়েক লাখ ডিপটিউবয়েল ও স্যালোমেশিন আছে তার প্রত্যেকটিতে এই উদ্ভাবন যোগ করা সম্ভব। বিশেষ করে যে সব এলাকায় গ্রিড বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু ডিজেল দিয়ে স্যালো চালানো হচ্ছে সেখানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ মেলায় এই উদ্ভাবনির প্রদর্শনী করা হয়েছে।
আশরাফুল আলম বললেন, মোটরের ক্ষমতার ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। স্যালো বা ডিপটিউবওয়েল দিয়ে যে পানি তোলা হচ্ছে তা মাটিতে পড়ার আগেই তার গতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ বাসাবাড়ি অথবা নতুন নতুন একটি স্যালো মেশিন বসিয়ে ব্যবহার করা যাবে। এতে বিদ্যুৎ এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।
বিদ্যুৎ মেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন নয়টি উদ্ভাবন প্রদর্শন করা হয়েছে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র রিজওয়ানউদ্দিন উদ্ভাবন করেছেন ঢেউ থেকে বিদ্যুতের। সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া বড় বড় নৌকাগুলোতে তাদের উদ্ভাবন যোগ করে ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ তৈরী করতে পারবে। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে তৈরী হবে বরফ। যা মাছ সংরক্ষনে সব সময় প্রয়োজন।
বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে বিশেষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির চারজন ছাত্র। কেউ যদি মিটারের আগেই বিদ্যুতের সংযোগ নেয় তবে সরাসরি সংশ্লিষ্ঠ দফতরে এলার্ম বাজবে। তখন সংশ্লিষ্ঠরা ব্যবস্থা নিতে পারবে। এতে চুরি ঠেকানো যাবে বলে মনে করছেন উদ্ভাবকরা। এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন মো. জোবায়ের হোসাইন, সৈয়দ মুহাম্মদ মাসরুর রহমান, আবির রায় ও মোস্তাক মাহমুদ। প্রফেসর ড. লুৎফুর কবীরের তত্বাবধানে তারা এই উদ্ভাবন করেছেন।
সৌর বিদ্যুৎকে জাতীয় গ্রিডে দেয়ার জন্য কমমূল্যের ইনভারটার উদ্ভাবন করেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির তিনজন ছাত্র। এরা হলেন, মারুফ ইসলাম, খন্দকার মোহায়মেনুল ইসলাম, সৌরভ দাস।
মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর নকশা উপস্থান করেছে। এবার মেলায় সেরা উদ্ভাবনী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া মেলায় ক বাতাসেও বায়ু বিদ্যুৎ তৈরীর উদ্ভাবন করেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা।
ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লি. (ডিপিডিসি) এই উদ্ভাবনগুলোকে পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন করার অর্থায়ন করবে বলে ঘোষনা দিয়েছে।
এবিষয়ে ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নজরুল হাসান বলেন, ছাত্রদের এই উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে অর্থায়ন করবে ডিপিডিসি। সরকার এধরণের উদ্ভাবনকে সব সময় উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।