সৌর বিদ্যুতের খোঁজে ক্রেতা বিক্রেতা
মেলা মানে শুধু দেখা কিম্বা কেনা নয়। কিছু শেখাও। দেখা ও কেনার মধ্যে জানার বিষয়টিই যেন বেশি হয়ে উঠছে। সাথে তরুণরা খুঁজছে চাকরির কোন মাধ্যম। অনেকে দেখছেন ভবিষ্যৎ ব্যবসায়ের কোন উপায়।
বিভিন্ন পক্ষের দেখা শোনা প্রয়োজন মেটানোর এই উপলক্ষ্য হয়ে উঠেছে সৌর মেলা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে সৌর মেলা। সৌর বিদ্যুতের নানা উপকরণ আর খুটি নাটি নানা বিষয় আছে মেলায়। চলছে সৌর-নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও স্থাপত্য-অবকাঠামো নির্মাণ শিল্প প্রযুক্তির ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। তিনদিনের মেলার শনিবার শেষ দিন। শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় মেলায় ছিল উপচে পড়া ভীড়।
সকাল থেকে ক্রেতা, দর্শনার্থী, বিনিয়োগকারি, শিক্ষার্থীরা মেলায় এসেছে দল বেধে। সৌর বিদ্যুৎ এবং এর দাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন অনেকে। ছোট ছোট নানা প্রযুক্তি। ভবনে হঠাৎ আগুন লাগলে বিপদের অন্ত থাকে না। মাথায় কাজ করেনা কীভাবে নেভানো যায় সে আগুন। কিন্তু যদি এমন ব্যবস্থা থাকে যে আগুনের ধোয়া ঘরে উড়লেই সেই ধোয়ায় নিভিয়ে দেবে আগুন? তাহলে তো কারও অগুন নেভানো নিয়ে চিন্তা করা লাগে না। হ্যাঁ তাই। ভবনে আগুন লাগলে সেই আগুনের কারণে সয়ংক্রিয়ভাবে শুরু হবে পানি ছিটানো। একা একা চালু হবে পানি ছিটানো যন্ত্র। যাকে বলা হচ্ছে সয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ব্যবস্থা আছে সয়ংক্রিয় সতর্ক বার্তা পৌছানোরও। এধরণের নানা প্রযুক্তির দোকানের কর্মিরা তাদের পণ্য বিষয়ে স্ববিস্তার বলতে ব্যস্ত।
মেলায় বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান জানার চেষ্টা করছে কীভাবে বিদ্যুৎ জ্বালানি সাশ্রয় করা যায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে যেমন কারখানার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে তেমনই সাশ্রয় হবে অর্থ। এতে দেশের প্রাথমিক জ্বালানি বাচঁবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের খরচ কমবে উৎপাদনে।
দেশি বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানি এই মেলায় অংশ নিয়েছে। তারা উপস্থাপন করেছে তাদের পণ্য।
উপস্থাপন করা হয়েছে সৌর বিদ্যুতে কীভাবে চলবে পানি গরম করা গিজার। কৃষিকাজে ব্যবহার করা পানি তোলা স্যালো চলছে সৌর বিদ্যুতে। কিম্বা প্রতন্ত এলাকায় যেখানে গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌছানো সম্ভব হয়নি সেখানে জ্বলছে সৌর আলো।
প্রদর্শনীতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব বাথরুম ফিটিংস, হিট কন্ট্রোল প্রযুক্তি ও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় আগুণ নিভানো ব্যবস্থা ও বিল্ডিং অটোমেশন সহ বিদ্যুৎ ও নির্মাণ শিল্পের নান আধুনিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ।
মেলায় যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, ভারত, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের ৯০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। স্টল আছে ১৫০টি। মেলায় ক্যাটারপিলার, কামিন্স, পারকিন্স, মিৎস্যুবিশি, স্টামফোর্ড, মারকন, ক্রস ওয়াল্ড গ্রুপ, বাংলা ক্যাট, ডানা গ্রুপ, জ্যাকসন ইন্ডিয়া, এনার্জি প্যাক, ইয়াংলি সোলার, প্রতিভো, সেনোওয়ার, স্কাইসেড, হাইবারজেন, চাইনাল্যান্ড, সোলারল্যান্ড, জিটিএস গ্রুপসহ সৌর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহকারী কোম্পানি অংশ নিয়েছে।
এক্সপোনেট এক্সিবিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক বলেন, স্থানীয় কারখানাগুলোকে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী আধুনিক যন্ত্রাাংশের আওতায় আনতে পারলে জাতীয় গ্রিড থেকে এখনই ৫০০ মেগাওয়াটের বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। এছাড়াও কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়বে। সৌর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ অফ গ্রিড এলাকায় বিদ্যুতায়ন, সূর্যের আলো সরাসরি ব্যবহার করে সেচ কাজ পরিচালনার ফলে গরমের সময় জাতীয় গ্রিডের চাপ কমানো সম্ভব।
এক্সপোনেট এক্সিবিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক সোলারটেক, ৫ম আন্তর্জাতিক পাওয়ারটেক ও ৪র্থ আন্তর্জাতিক গ্রীণবিল্ড বাংলাদেশ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় প্রদর্শনীর পাশাপাশি হচ্ছে বিভিন্ন সেমিনার। গতকাল শুক্রবার দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই বিনিয়োগের উপর ‘গ্রীণ ইনভেষ্টমেন্ট সামিট’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বক্তারা, শিল্প প্রতিষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্বালানি খরচ কমানোর উপর তাগিদ দেন।