হঠাৎ লোডশেডিং বেড়েছে
রাজধানীসহ সারাদেশেই হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এক মাস আগেও যেখানে এক থেকে দুই বার লোডশেডিং হতো সেখানে এখন শহরে চার থেকে পাঁচবার আর গ্রামে আবার ঘন্টা ঘন্টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে সেখানে জ্বালানি সংকট ও বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামতের কারণে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে।
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এখন গরম বেশি পড়ছে। একদিকে প্রচন্ড গরম অন্যদিকে লোডশেডিং এর অত্যাচারে নতুন করে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ। রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, খিলগাও, বাসাবো, মুগদা, শান্তিনগর, মগবাজার, সিদ্ধেশ্বরী, মিরপুর, উত্তরাসহ পুরান ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকা থেকে ঘন ঘন লোডশেডিং এর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বনশ্রী থেকে মারিয়া জানান, গত মাসে দিনের বেলায় লোডশেডিং হতো না বললেই চলে। সন্ধ্যার দিকে খুব বেশি হলে একবার লোডশেডিং হতো। এখন দিনের বেলায় কমপক্ষে তিন থেকে চার বার আর সন্ধ্যায় দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং হচ্ছে। মারিয়া জানান, গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে পড়াশুনা করতে সমস্যা হচ্ছে। একই অভিযোগ রামপুরার বাসিন্দা ফারজানা রহমানের তিনি জানান, গরমের সঙ্গে লোডশেডিং হয়ে চরম ভোগান্তিতে আছেন তারা। বাসায় অসুস্থ মা লোডশেডিং হলেই আরো অসুস্থ বোধ করছেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে এত ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার ঘটনা কয়েকমাস ধরেই ছিল না বলে তিনি জানান।
উত্তরা থেকে রেহেনা সুলতানা, সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং হচ্ছে। সন্ধ্যায় এক থেকে দুই বার প্রায় এক ঘন্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। বাচ্চাদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে। বিদ্যুৎ না থাকলে আইপিএস দিয়ে বাসার কাজ হলেও গরমের কারণে বাচ্চাদের পড়তে বসানো যাচ্ছে না। এছাড়া শান্তিনগরের আশা ইসলাম জানান, এমনিতেই ফ্ল্যাটবাড়িতে লোডশেডিং হলে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু হঠাৎ করে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ার কারণে সম্প্রতি তাদের ফ্ল্যাটের জেনারেটরটি নষ্ট হয়ে যায়। এতে পর পর কয়েকদিন তারা লোডশেডিং এর অত্যাচার সহ্য করেন। প্রতিবারই বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফট বন্ধ রাখা হয়। এতে ১৯ তলার বাসিন্দা আশার পরিবারের কেউ আর বাসায় উঠতে বা নামতে পারেননি। এক ঘন্টার লোডশেডিং চলাকালীণ পুরো সময় তারা এভাবেই সময় কাটান। এদিকে পুরানা পল্টনে চাকরি করেন রাজিব। তিনি জানান, বিদ্যুৎ চলে গেছে গরমে কারণে অফিসে বসে থাকাই দায় হয়ে যায়। বিশেষ করে সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে চারবার এক ঘন্টা করে লোডশেডিং হয়। এ সময়গুলো অফিসের বেশিরভাগ কাজ বন্ধ রাখা হয়। কারণ ফটোকপি মেশিন, প্রিন্টার অথবা কম্পিউটার কোনোটাতেই তখন কাজ করা যায় না।
এ বিষয়ে পিডিবির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনের তুলনায় গ্যাস কম পাওয়ার কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের উৎপাদন কম হওয়ার কারণে ঘাটতি হচ্ছে। লোডশেডিং করে সেই ঘাটতি মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পিডিবি জানায়, একদিকে জ্বালানি ঘাটতি অন্যদিকে বেশি কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামতের কারণে বন্ধ আছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা আছে ১৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের। কয়েকদিন আগেও গড়ে ৯০ থেকে ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হত। রোববার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৭৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হয়েছে।
পিডিবির হিসেবে, বর্তমানে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বেসরকারি হিসেবে এ চাহিদা প্রায় আট হাজার মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে রোববার সরবরাহ করা হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। জ্বালানি সংকটের কারণে এক হাজার ৪০৪ মেগাওয়াট এবং মেরামতের কারণে এক হাজার ৭৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে।
গ্যাসের বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসন মনসুর বলেন, শিল্প ও সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ দিতে গিয়ে বিদ্যুতের গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কমাতে হয়েছে। সারকারখানাগুলো প্রায় ছয় মাস বন্ধ ছিল। এখন আর বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। সার যেমন প্রয়োজন বিদ্যুৎও তেমনই প্রয়োজন। শিল্পেও গ্যাস দিতে হবে।
দেশে দৈনিক মোট গ্যাসের চাহিদা দুই হাজার ৭০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে এখন গড়ে সরবরাহ হচ্ছে দুই হাজার ২০০ কোটি ঘনফুট। এরমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৯ শতাংশ, শিল্পকারখানায় ২০, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬, বাসাবাড়িতে ১২, সার উৎপাদনে সাত, সিএনজিতে পাঁচ এবং বাণিজ্যিক কাজে দুই শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে।