১০০ বছরে বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত ১০০ বছরে সারাবিশ্বে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাংলাদেশে বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈজ্ঞানিকদের সংগঠন দ্য ইন্টার গভার্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেইঞ্জ (আইপিসিসি) এর পঞ্চম প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইপিপিসির প্রধান সমন্বয়কারী ড জন চার্জ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী শতকে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে করে প্লাবিত হবে বাংলাদেশের নীচু এলাকা। তবে উন্নত দেশগুলো সচেতন হলে আগামী শতকে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির বেশি বাড়বে না।

এতে বলা হয়, সর্বাধিক কার্বন-ডাই অক্সাইড উৎপাদনকারী দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মতো দেশ সচেতন হলে আগামী শতকে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির বেশি বাড়বে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫০ সাল থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রার কারণে বাড়ছে মহাসগরের তাপমাত্রা। এর ফলে বরফ গলতে শুরু করছে এবং অস্বাভাবিকভাবে সাগরের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেটা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য হুমকি।

এতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বের জন্য হুমকি। এতে করে একদিকে যেমন খাবার পানি অভাব দেখা দেবে অপরদিকে পানি বন্দি হবে মানুষ। এছাড়া খরা, বন্যা ও নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে হবে।শিল্পায়নের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এর প্রভাব সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পড়বে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, জলবায়ু পরির্বতনের কারণে প্রতিবছর আমাদের জিডিপির ১ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। কেননা গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার যে বিষয়টি তা ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের সৃষ্টি, আমাদের নয়। কিন্তু নেপাল, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা গ্রিন হাউজের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সোচ্চার হতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মেজবাউল আলম বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং আমাদের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, সাইক্লোন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছি আমরা। এ রিপোর্টে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তুলে ধরা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাব এবং করণীয়।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, এই প্রতিবেদনে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। ন্যাশনাল ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ড সরকারের অর্থায়নে কাজ করা যাচ্ছে। তা ছাড়া ক্লাইমেট চেঞ্জ রিজিলিয়ন ফান্ড দাতাদের সহায়তায় কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্ব কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মেজবাউল আলম এবং বন ও পরিবেশ সচিব সফিকুর রহমান পাটোয়ারী।